সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর
ওষুধের সর্বাধিক বিক্রয়মূল্যের (এমআরপি) উপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্টের বিজ্ঞাপন এখন রীতিমতো ছেয়ে গিয়েছে। কিছু ওয়েবসাইট, অ্যাপের পাশাপাশি ওষুধের দোকানেও মিলছে বিশেষ ছাড়। কখনও আবার এমআরপি–র উপর ২০–২৫ শতাংশও ছাড় মেলে। আর এখানেই সমস্যা রয়েছেন বলে মনে করেন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুর শাখার প্রতিনিধিরা। তাঁদের মতে, ডিসকাউন্টের প্রলোভনে পড়ে বহু ক্রেতা অজান্তে ভেজাল ওষুধ কিনছেন।
জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্য থেকে চোরাই পথে ভেজাল ওষুধ আসছে কলকাতায়। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও শহরে। ব্যতিক্রম নয় শিল্পনগরী দুর্গাপুরও। গত তিন দিন আগে স্টিল টাউনশিপের এ-জ়োন এলাকার এক ক্রেতা অনলাইনে একটি মেডিকেটেড সানস্ক্রিন কিনে ঠকেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ক্রেতাদের এই বিষয়ে সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুর শাখার প্রতিনিধিরা।
ভালো ডিসকাউন্ট পেয়ে অনলাইনে ‘সানহল্ট গোল্ড’ নামে সানস্ক্রিনটি কিনেছিলেন এ-জ়োনের ওই বাসিন্দা। সেটি গায়ে মাখার পর ত্বক জ্বলতে থাকে। একটি ওষুধের দোকানে দেখালে ওষুধ বিক্রেতা তাঁকে জানান, এটি ভেজাল। পাশাপাশি ওই একই সানস্ক্রিনের আসল টিউব বের করে ওই ব্যক্তিকে দেখান। পাশাপাশি দু’টি টিউবকে রাখলে বোঝার উপায় নেই কোনটা আসল আর কোনটা ভেজাল। পরে ওষুধ বিক্রেতা বুঝিয়ে দেন, অনলাইন থেকে কেনা ওই সানস্ক্রিনের টিউবে একটি সাদা টেপ সাঁটিয়ে তার উপর ওষুধের ব্যাচ নম্বর, এমআরপি লেখা রয়েছে। এমন ভাবে সাদা টেপ লাগানো রয়েছে যা সহজে ধরা যাবে না।
ওষুধ বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, শুধু সানস্ক্রিন নয়, বিভিন্ন ধরনের ভেজাল ওষুধও বিক্রি হচ্ছে দুর্গাপুর শহরে। সাধারণ মানুষ বুঝবেন কী ভাবে কোনটা আসল আর কোনটা নকল ওষুধ? বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুর শাখার সেক্রেটারি তরুণ রায় বলেন, ‘প্রত্যেক ক্রেতাকে বলব, ওষুধ কিনলে বিল নেবেন। সেখানে ওষুধের ব্যাচ নম্বর সঠিক লেখা রয়েছে কি না দেখে নেবেন। কোনও ভাবেই বিপুল ছাড়ের ফাঁদে পা দেবেন না। একজন ওষুধ বিক্রেতা খুব বেশি হলে ক্রেতাকে ১০ থেকে ১২ শতাংশ ছাড় দিতে পারেন। তার বেশি যদি কেউ ছাড় দেন, তা হলে বুঝতে হবে ওই ওষুধ বিক্রেতা তাঁর দোকান লাটে তুলছেন। অথবা তিনি ভেজাল ওষুধ বিক্রি করছেন। এই বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্ক করে আমরা সংগঠনের তরফে প্রচার করছি।’
ওষুধের হোলসেল ও রিটেল মূল্যের উপর কমিশন নির্ধারণকারী ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার (ডিপিসিও) অনুযায়ী, একজন ওষুধের হোলসেলার ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকেন। একজন খুচরো বিক্রেতা ১৬ থেকে ২০ শতাংশ কমিশন পান। এর উপর খুচরো বিক্রেতারা ক্রেতাদের ছাড় দিয়ে থাকেন।
দুর্গাপুরের এক ওষুধ ব্যবসায়ী সুজয় পোদ্দার বলেন, ‘১০ শতাংশের বেশি ছাড় দেবো কী ভাবে? যে কোনও ওষুধের দোকানে একটা নির্দিষ্ট খরচ রয়েছে। একজন ফার্মাসিস্ট রাখতে হলে তাঁকে ন্যূনতম প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। দোকানের কর্মীদের বেতন রয়েছে। দোকানের নানা ধরনের খরচ রয়েছে। বেশি ছাড় দিলে হয় ব্যবসা লাটে উঠবে। না হলে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করতে হবে।’