• মৌমাছির হামলায় জখম ১২, একজন ভর্তি আইসিসিইউতে
    এই সময় | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, আসানসোল: মৌমাছির হামলায় ত্রস্ত চিত্তরঞ্জন। রবিবার একইদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ জন। তাঁদের মধ্যে চার জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুশীল দাস নামে এক ব্যক্তির জখম এতটাই গুরুতর যে তাঁকে রাখা হয়েছে আইসিসিইউ–তে। গত দেড় মাসে এ নিয়ে তৃতীয় বার মৌমাছির আক্রমণের ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে রেল শহরে।

    এ দিন রূপনারায়ণপুর থেকে চিত্তরঞ্জনে ঢোকার মুখে তিন নম্বর গেট এলাকায় দফায় দফায় হামলা চালায় মৌমাছির দল। পথচারী থেকে মোটরবাইক চালক, কেউই রেহাই পাননি। আক্রান্তদের মধ্যে মানিক নস্কর বলেন, ‘সকাল ১১টা নাগাদ তিন নম্বর গেট এলাকায় অতর্কিতে হামলা চালায় একদল মৌমাছি। রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকি আমি। হুলের যন্ত্রণায় একই অবস্থা হয় আরও কয়েকজন পথচারীর। কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও আরপিএফ কর্মীরা আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যান।’

    এর পর ফের দুপুর দেড়টা নাগাদ আর এক দফায় চলে মৌমাছির হামলা। সে সময়ে আমলাদহি বাজারের ব্যবসায়ী সুশীল দাস দোকান বন্ধ করে কল্যাণগ্রাম রামকৃষ্ণপল্লির বাড়িতে স্কুটিতে ফিরছিলেন। আচমকা কয়েকশ মৌমাছি তাঁকে ঘিরে ফেললে স্কুটি দাঁড় করিয়ে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময়ে তৃণমূলের ছাত্রনেতা মিঠুন মণ্ডল অন্যদের সহযোগিতায় সুশীলকে কোনওক্রমে উদ্ধার করেন। তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে অ্যাম্বুল্যান্সে কস্তুরবা গান্ধী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, সুশীলের মুখ, মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে যে ভাবে হুল ফুঁটে ছিল তা বিপজ্জনক। আইসিসিইউ–তে ভর্তি করিয়ে হুলগুলি বের করেন চিকিৎসকরা। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও তিন জন। চিত্তরঞ্জনের প্রিন্সিপাল চিফ মেডিক্যাল অফিসার রাজকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মৌমাছির কামড় খেয়ে চার জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

    এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২ এপ্রিল চিত্তরঞ্জনের দুই এলাকায় মৌমাছির কামড়ে জখম হন ছ’জন। ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা দিয়ে বাবার সঙ্গে মোটরবাইকে প্রশান্ত অ্যাভিনিউয়ে বাড়ি ফিরছিল চিত্তরঞ্জন ডিভি বয়েজ় স্কুলের ছাত্র বিভাস শ্রীবাস্তব। সে সময়ে ফতেপুর বাজার সংলগ্ন রাস্তায় মৌমাছির আক্রমণে গুরুতর জখম হন ওই ছাত্র ও তাঁর রেলকর্মী বাবা। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় রেলকর্মীকে। ২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ চিত্তরঞ্জন জিএম অফিস সংলগ্ন রাস্তার উপর মৌমাছির আক্রমণে জখম হন প্রবীর শিকদার ও রাজকিশোর প্রসাদ নামে দুই রেলকর্মী। তাঁরা চিত্তরঞ্জনের সিমজুড়ি ও হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা। তাঁদের বাঁচাতে এসে মৌমাছির হুলে জখম হন দুই আরপিএফ কর্মীও।

    কিন্তু কেন বার বার মৌমাছি হামলা চালাচ্ছে রেল শহরে? কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু–পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ এবং বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অসমঞ্জ চট্টরাজ বলেন, ‘ওখানে নিশ্চয়ই পরিবেশ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কোনও রাসায়নিক কারণ বা শব্দ দূষণের জেরে ওর বাসা বাঁধতে পারছে না। সেই কারণেই ওরা মানুষকে শত্রু ভেবে দল বেঁধে হামলা চালাচ্ছে। এই ধরনের মৌমাছি এখনও যে চিত্তরঞ্জন বা কোলিয়ারি অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এটা কিন্তু একটা ভালো দিক। মনে রাখা দরকার, যে মৌমাছি হুল ফুঁটিয়ে দিচ্ছে, সে কিন্তু বেঁচে থাকে না, মারা যায়।’

    অন্য একটি কারণের কথা জানিয়েছেন চিত্তরঞ্জনে সিটুর সাধারণ সম্পাদক রাজীব গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘এক ধরনের বড় পাখি রয়েছে যারা মধু খায়। স্থানীয় ভাবে আমরা জানতে পেরেছি, ওই পাখি মৌচাকে ঠোকরালেই মৌমাছির দল বেরিয়ে এ ভাবে হামলা চালায়।’ রাজীব জানান, মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে তাঁরা চিত্তরঞ্জনের সিভিল দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাবেন। একই কথা জানিয়েছেন চিত্তরঞ্জন রেলওয়ে মেন্‌স কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিং। তিনি বলেন, ‘রবিবার যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে আট জন চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা ও চার জন রূপনারায়ণ পুর এলাকার বাসিন্দা।

    আতঙ্কে রয়েছেন চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ত্রিদিব সন্তপা কুণ্ডু। তিনি বলেন, ‘এর আগে যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, তখন আমি নিজেই গাড়িতে ওই রাস্তা পার করেছি। আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীরা হেঁটে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। তাঁদের নিয়েই আমার ভয়।’ রূপনারায়নপুরের বাসিন্দা এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ আরমান জানান, বিষয়টি নিয়ে চিত্তরঞ্জনের ডিজিএমকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটা রেলের এলাকা। তাই রেলকেই বিষয়টি দেখতে হবে।’ আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রেল প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত। এই সব মৌমাছি যদি শিশুদের কামড়ে দেয়, তা হলে তাতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’

  • Link to this news (এই সময়)