এ বার কলকাতার পথে নামলেন ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। সিবিআইয়ের দেওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়া এই প্রার্থীদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করেছিল হাই কোর্ট। সোমবার তাঁরা মিছিলে দাবি করলেন, সামাজিক সম্মান ‘নষ্ট’ হচ্ছে তাঁদের। সিবিআইয়ের যে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে জানিয়েছিল হাই কোর্ট, তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তাঁরা।
সোমবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার পর্যন্ত মিছিল করেন ‘অযোগ্য’রা। সেখানেই তাঁরা নিজেদের সামাজিক সম্মান ‘নষ্ট’ হচ্ছে বলে দাবি করেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের পেশ করা তথ্যপ্রমাণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই ‘অযোগ্য’দের বেতন ফেরত দিতেও বলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানায়, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রশ্নাতীত ভাবে যাঁরা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ (টেন্টেড), তাঁদের চাকরি বাতিলের সঙ্গে বেতনও ফেরত দিতে হবে। এ রকম প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এ বার সেই ‘অযোগ্য’রাই পথে নামলেন।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্ত করেছে সিবিআই। তদন্ত সূত্রে ওএমআর শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসার প্রাক্তন কর্মীর কাছ থেকে গাজিয়াবাদে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা। সেখানে কিছু ওএমআর শিটে গোলমাল ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু ওএমআর শিট সাদা ছিল। অভিযোগ, সেই সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়েও অনেকে চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁদের ‘অযোগ্য’ প্রার্থী বলে জানায় হাই কোর্ট। ওই ‘অযোগ্য’ প্রার্থীরা সোমবার পথে নেমে গাজিয়াবাদ থেকে পাওয়া সেই হার্ডডিস্কের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।
চাকরিহারা রীতেশ ঘোষ বলেন, ‘‘এই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ওএমআর শিটে গন্ডগোল রয়েছে বলে কোর্টে তথ্য দিয়েছিল সিবিআই। তাদের অভিযোগ যে, ওই ওএমআর শিট ম্যানুপুলেট করা হয়েছে। সিবিআই তথ্য দিয়েছে মানেই সেই তথ্য যে সঠিক, তা নয়।’’ রীতেশদের অভিযোগ, যথাযথ তদন্ত না-করেই সিবিআই আদালতে তথ্য দিয়েছে। প্রসঙ্গত, সিবিআই আদালতে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি ওএমআর শিটে গন্ডগোল রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছিল। আর এক চাকরিহারা বিপ্লব বিবার বলেন, ‘‘সাড়ে ছ’বছর কাজ করেছি। ভুয়ো তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমাদের ‘অযোগ্য’ বলা হচ্ছে।’’ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করতে পারেন।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে প্রচুর সাদা খাতা উদ্ধার করেছে সিবিআই। অর্থাৎ, কোনও প্রশ্নের উত্তর না-লিখে সাদা খাতা জমা দিয়ে কেউ কেউ পাশ করেছেন এবং চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসএসসির নিয়োগের জন্য যে প্যানেল গঠন করা হয়েছিল, চাকরিপ্রাপকদের অনেকের নামই ছিল না সেই প্যানেলে। অর্থাৎ, প্যানেলের বাইরে থেকে কেউ কেউ চাকরি পেয়েছেন। তাঁদেরও ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসএসসির নিয়োগ প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেউ কেউ তার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। তাঁরাও আদালতের চোখে ‘অযোগ্য’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলেন।