• মঙ্গলে বাংলা নববর্ষে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের কর্মসূচিও রাজ্য জুড়ে, বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে ‘বাঙালি গরিমা’য় শান তৃণমূলের
    আনন্দবাজার | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • মঙ্গলবার পয়লা বৈশাখ। নতুন বছরের প্রথম দিন পশ্চিমবঙ্গ ১৪৩২ বঙ্গাব্দে পা রাখবে। বৈশাখের প্রথম দিনটিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সরকারি ছুটি হলেও রাজ্য জুড়ে সরকারি স্তরে পালিত হবে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের অনুষ্ঠান। বস্তুত, আগামী বছর বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে তৃণমূল এই দিনটিতে ‘বাঙালি গরিমা’য় আরও শান দিতে চাইছে।

    প্রসঙ্গত, ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ ঘোষণা এবং পালনের নেপথ্যে রয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ২০ জুন দিনটি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করে বিজেপি। তাদের যুক্তি, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আন্দোলনের জেরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ। যেহেতু শ্যামাপ্রসাদের দাবি মেনে বাংলা প্রদেশের বিভাজন এবং পশ্চিমবঙ্গকে ভারতের অংশ হিসেবে রাখার প্রস্তাব ১৯৪৭ সালের ২০ জুন কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলা প্রাদেশিক আইনসভার (এখন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা) অধিবেশনে গৃহীত হয়েছিল, তাই ওই দিন পশ্চিমবঙ্গের ‘আবির্ভাব দিবস’ হিসেবে পালন করে বিজেপি।

    ২০২৩ সালের ২০ জুন বিধানসভার বাইরে বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই দিনই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজভবনেও ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের আয়োজন করেন। রাজভবনের ওই কর্মসূচিতে আপত্তি জানিয়ে রাজ্যপালকে সেই অনুষ্ঠান না-করতে অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ মানেননি। রাজভবনে ঘটা করে ওই দিন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালিত হয়। তার পরেই ‘রাজ্য দিবস’ ঠিক করতে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে পয়লা বৈশাখকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। পরে বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে সেই মর্মে প্রস্তাবও পাশ করিয়ে নেয় রাজ্য সরকার। যদিও সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল বিরোধী বিজেপি।

    সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার পর গত বছর পয়লা বৈশাখে ছিল প্রথম ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। কিন্তু লোকসভা ভোটের ব্যস্ততা এবং আদর্শ আচরণবিধির কারণে দিনটি পালন করতে পারেনি তৃণমূল। তবে সরকারি স্তরে ছোট আকারে দিনটি পালন করেছিল রাজ্য সরকার। লোকসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় বিজেপি। তৃতীয় বার সরকার গঠন করলেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার জোট শরিকদের উপর নির্ভরশীল। তার পরে গত বছর ২০ জুন রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের আয়োজন করা হয় নমো-নমো করে। কিন্তু অনুষ্ঠানে ছিলেন না রাজ্যপালই।

    এ বছর বাংলা নববর্ষে সরকারি অফিসে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রবীন্দ্রসদনে সরকারের তরফেই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ উদ্‌যাপনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তবে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দিনটিকে ‘বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। রবীন্দ্রসদনের একতারা মুক্তমঞ্চে পয়লা বৈশাখ সকাল ৮টা থেকে দিনভর চলবে বঙ্গসংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত নানা অনুষ্ঠান। পাশাপাশি, রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে বিকেলে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের উপস্থিতিতে ‘বাংলা দিবস’ পালিত হবে। সেখানে জনপ্রিয় শিল্পীদের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। জেলা স্তরেও তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ ‘বাংলা দিবস’ পালন করবে। প্রসঙ্গত, এ বছর অনেক আগে থেকেই লিখিত বিবৃতি জারি করে তৃণমূলের রাজ্য সংগঠন থেকে শুরু করে জেলা, ব্লক ও বুথ স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। লিখিত নির্দেশে বাঙালি গরিমাকে জাগিয়ে তুলতে দিনটি পালন করতে বলেছেন তিনি। তাই তৃণমূলের নেতারা পয়লা বৈশাখে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের কর্মসূচিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

    ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত ব্যর্থই হয়েছে বিজেপি। তার পর থেকেই কট্টর হিন্দুত্বের লাইনে গিয়ে আগামী বিধানসভা ভোটের জমি তৈরি করতে নেমেছে পদ্মশিবির। বিজেপির সেই রণনীতির জবাব দিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’-এ ‘বাঙালি গরিমা’কে ব্যবহার করে পাল্টা চাল দিতে চাইছে শাসক তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ‘বহিরাগত’দের দল বলে অভিযুক্ত করেছিলেন মমতা-সহ তৃণমূলের নেতারা। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও সেই ধারা বজায় ছিল। এ বার বিজেপির ‘কড়া’ হিন্দুত্বের প্রচার দেখে কৌশলে বদল এনেছে তৃণমূল। হিন্দুত্বের পাল্টা ‘বাঙালি গরিমা’ তুলে ধরতে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটিকেই বেছে নিয়েছে মমতার দল।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)