• ফুটবল বিশ্বকাপে কানাডা যাবে কলকাতার জোড়া ট্রাম, কিন্তু সেখানে চলবে কীভাবে? প্রশ্ন রাজ্য পরিবহণ দফতরে
    আনন্দবাজার | ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • আগামী বছর আবারও বসবে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। আমেরিকা এবং মেক্সিকোর সঙ্গেই এই ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে কানাডা। সেই সূত্রে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতা জুড়ে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের এই মহা আয়োজনের সঙ্গে। প্রথম বার বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পেয়ে কোনও খামতি রাখতে চায় না কানাডা। বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দিয়ে কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া হবে দু’টি ট্রাম। কিন্তু সেই ট্রাম কী ভাবে ভ্যাঙ্কুভারে চালানো হবে, তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। আগামী বছর ১১ জুন থেকে ১৯ জুলাই ওই তিন দেশে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা।

    ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর একটি বেসরকারি সংস্থার তরফে প্রস্তাব আসে, ফিফা বিশ্বকাপ উপলক্ষে কলকাতার দু’টি ট্রাম কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে পাঠানো হোক। কানাডার সাতটি শহরের ন’টি মাঠে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি। ভ্যাঙ্কুভারের বিসি প্লেস স্টেডিয়ামে সাড়ে ৫৪ হাজার মানুষ বসে ফুটবল ম্যাচ দেখতে পারবেন। সেই বিশ্বকাপ দেখার অভিজ্ঞতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চায় কানাডা। তাই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রাম দু’টি কানাডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, যে হেতু কলকাতা হাই কোর্টে ট্রাম সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন, তাই আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। অবশ্য কলকাতা হাই কোর্ট থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়া যাবে বলেই আশা পরিবহণ দফতরের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়।

    ভ্যাঙ্কুভার শহরে ১.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বিশেষ রুটে এই ট্রাম দু’টি চালানো হবে। বিশ্বকাপ চলাকালীন বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে রকমারি ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে এই আয়োজন। পরিবহণ দফতর জেনেছে, ট্রাম দু’টি চাপিয়ে দু’কিলোমিটার দূর থেকে দর্শকদের স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের প্রশ্ন, ‘‘ওই ট্রামগুলি কী ভাবে চালানো হবে?’’ কানাডার মতো উন্নততর দেশে ট্রাম পরিষেবাকে অত্যাধুনিক করা হয়েছে। ফলে ইউরোপ-সহ বিশ্বের যে সব দেশে ট্রাম চলাচল করে সেগুলিকে সময়োপযোগী করা হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনেক বেশি আধুনিক করা হয়েছে ট্রাম পরিষেবাকে। সেই সব দেশে ট্রাম চলে প্যান্টোগ্রাফ প্রযুক্তিতে।

    কলকাতা শহরের ট্রাম চলে ব্রিটিশ জমানার কপিকল পদ্ধতির মাধ্যমে। তাই দু’টি ট্রাম নিয়ে গিয়ে আদৌ উদ্যোক্তারা কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। এক প্রবীণ আধিকারিকের কথায়, ‘‘যদি ভ্যাঙ্কুভারে ট্রাম চালাতেই হয়, তা হলে আমাদের পুরোনো প্রযুক্তি নিয়ে গিয়েই সেখানে ট্রাম চালানো সম্ভব হবে। সেখানে আমাদের পদ্ধতিতে ট্রামলাইন পাততে হবে, সঙ্গে যে পদ্ধতিতে ট্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ট্রাম চালানো হয়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।’’

    বিশ্বকাপ ফুটবলের মঞ্চে কলকাতার ট্রাম জায়গা পাওয়ায় ট্রাম সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিদেশে যাচ্ছে, এতে আমাদের অত্যন্ত খুশি হওয়া উচিত।” তবে ট্রাম সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলার কারণে রাজ্য সরকার এখনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ করতে পারেনি। কিন্তু সেই ট্রাম কানাডা পাঠানো হলে তা চলাচল করবে কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)