নতুন নিয়োগ অথবা চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকাদের চাকরিতে বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ার আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় কড়া নেড়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আগামী ১৭ এপ্রিল মামলাটির শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে শীর্ষ আদালতের রায়ে চাকরিহারানোরা।
চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ কাটিয়ে ১৬ এপ্রিল (বুধবার) খুলছে স্কুলগুলি। আপাতত ক্লাস হবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু চাকরিহারা শিক্ষকরা অধিকাংশই স্কুলে আসবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান প্রধান শিক্ষকরা। শিক্ষক-সঙ্কটের মধ্যে কী ভাবে চলবে স্কুল? তা নির্ধারিত করার জন্য রবিবার বৈঠক করেন প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠন।
‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’ সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার সভাপতি অমিতেশ চৌধুরী জানান, এ দিনের বৈঠকে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনই স্কুলগুলি আপাতত কী ভাবে পরিচালিত হবে, সেই নিয়েও আলোচনা হয়।
এই সংগঠনের প্রতিনিধিদের দাবি, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাসের একাধিক সেকশনকে এক করে ক্লাস নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আগের থেকে বেশি ক্লাস নেবেন প্রধান শিক্ষকরা।
মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রসূন কুমার পড়িয়া বলেন, ‘আমি ইংরেজি পড়াই। এতদিন সপ্তাহে ১৮টি ক্লাস ছিল। তা আরও বাড়িয়ে দেব।’ মোহাড় ব্রহ্মময়ী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপ শাসমল বলেন, ‘আমি রসায়ন পড়াই। আমিও নিজের ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছি।’ একই কথা জানিয়েছেন পিংবনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলা বিষয়ের শিক্ষক। আমি ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া শুরু করেছি। কিন্তু স্কুলে জীববিদ্যা, রসায়ন ও নিউট্রেশনের এখন কোনও শিক্ষক নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হবে।’ সরকারি নির্দেশিকা না এলে ‘ক্লাস্টার’ (পাশের স্কুল থেকে শিক্ষককে এনে ক্লাস করা) পদ্ধতিতে স্কুল চালানো বা স্কুলে অতিথি শিক্ষক বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ যে সম্ভব নয়, তা জানিয়েছেন প্রসূন কুমার পড়িয়া, অরূপ প্রধান, দীপঙ্কর তেওয়ারিরা।
পাশাপাশি চাকরিহারাদের বেতন নিয়েও প্রধান শিক্ষকদের কোনও স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়নি বলে জানানো হয় অমিতেশ চৌধুরীর তরফে। তিনি বলেন, ‘আপাতত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। কোনও নির্দেশিকা পাওয়া না গেলে বেতনের রিকুইজিশন ফর্মে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদেরও নাম রাখব।
সেক্ষেত্রে আমরা এই মর্মে ডিআই-কে একটি মেল করব। কারণ তিনি এখন ডিডিও (বেতনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন)। সেই মেল আমরা ফরোয়ার্ড করব মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও বিকাশ ভবনেও।’
অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করানো বা নিজেদের পুরোনো কর্মস্থলে ফিরে যাওয়াও যে সম্ভব নয়, তা জানিয়েছেন চাকরিচ্যুত শিক্ষক অভিজিৎ গিরি, অতনু দত্ত, কল্যাণ মাইতিরা। তাঁদের দাবি, স্কুলে ফিরলে সম্মানের সঙ্গেই ফিরব।
(তথ্য সহায়তা: মণিরাজ ঘোষ)