পা ভাঙার চিকিৎসা করাতে এসে মহিলার মৃত্যু, চাঞ্চল্য মেডিক্যালে
বর্তমান | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পা ভাঙার চিকিৎসা করাতে এসে মৃত্যু হল এক মহিলার। জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের অধীন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ওই ঘটনায় আলোড়ন ছড়িয়েছে। মৃতার নাম জানকী মালাকার (৪২)। বাড়ি জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ব্রজপুর মালিপাড়ায়। রোগীর পরিবারের দাবি, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও ওই রোগীকে ৭২ ঘণ্টা কোনও চিকিৎসক দেখেননি বলে অভিযোগ মৃতার পরিজনদের। এনিয়ে সোমবার জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার ছেলে রণজিৎ মালাকার। এরই পাশাপাশি মেডিক্যালের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন মৃতার পরিজনরা। এ ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিস এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
মেডিক্যালের সুপার ডাঃ কল্যাণ খাঁ বলেন, ফ্যাট এম্বলিজমের কারণে ওই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এক্ষেত্রে মজ্জা রক্তনালিতে ঢুকে যায়। ফলে বাধাপ্রাপ্ত হয় রক্ত চলাচল। মস্তিস্কে রক্ত পৌঁছতে পারে না। যার কারণে রোগীর অবস্থা আচমকা সঙ্কটজনক হতে পারে। এমনকী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে ৭২ ঘণ্টা ধরে ওই রোগীকে কোনও চিকিৎসক দেখেননি বলে পরিবার যে অভিযোগ করছে, তা ঠিক নয়। বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। রবিবারও ওই রোগীকে চিকিৎসকরা দেখেছেন। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথাও বলতে চেয়েছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু সেসময় রোগীর পরিবারকে পাওয়া যায়নি।
মৃতার ছেলে বলেন, গত ৩১ মার্চ পড়ে গিয়ে মায়ের বাঁ পা ভেঙে যায়। সেসময় চিকিৎসার জন্য মাকে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের অধীন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক মায়ের পায়ে প্লাস্টার করে ছেড়ে দেন। এরপর নির্দেশ মতো ৭ এপ্রিল ফের মা’কে ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসি। তখন মা’কে ভর্তি করে নেওয়া হয়। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, মায়ের পায়ে অপারেশন করতে হবে। সেইমতো ৯ এপ্রিল মায়ের ভাঙা পায়ে অপারেশন হয়। ওটি হওয়ার পর থেকে মা’কে দেখতে মাত্র একবার এসেছেন চিকিৎসক। ৭২ ঘণ্টা ধরে মা’কে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়েছিল। এদিন ভোরে আয়া ফোন করে জানান, মায়ের অবস্থা ভালো নয়। খবর পেয়েই আমরা দ্রুত হাসপাতালে চলে আসি। ওয়ার্ডে পৌঁছে দেখি, মা ছটফট করছে। মুখ দিয়ে গ্যাজলা বের হচ্ছে। মা’কে বাঁচানোর জন্য ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সদের বলি। তাঁরা আমাকে ধমক দিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পরই খবর আসে, মা মারা গিয়েছে। এটা চিকিৎসায় গাফিলতি ছাড়া আর কী হতে পারে!
মৃতার পরিজনদের সঙ্গে এদিন বিক্ষোভে শামিল হন খারিজা বেরুবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপ প্রধান প্রশান্ত সরকার। তাঁরও অভিযোগ, সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার কারণেই আমাদের এলাকার ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছি। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পা ভাঙার চিকিৎসা করাতে গিয়ে একজন সুস্থ মহিলার মৃত্যু, কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।