তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: হালখাতা বা খেরোর খাতা। এক সময় যে লাল কাপড়ে মোড়া, ফিতে দিয়ে বাঁধা এক হিসেবের খাতা, সারা বছর থাকত ব্যবসায়ীদের হাতের সামনে। সেই খাতার চল আজ প্রায় উঠেই গিয়েছে। ডিজিটাল যুগে খেরোর খাতার বদলে এসেছে অত্যাধুনিক অ্যাপ। সারা বছরের হিসেব সযত্নে নিখুঁতভাবে সেই অ্যাপের ভরসাতেই থাকেন নতুন যূগের ব্যবসায়ীরা। তবে বাঙালির মনেপ্রাণে আজও অমলিন এক নস্টালজিয়ার নাম হালখাতা। নববর্ষের আগে এখনও শিলিগুড়ির মহাবীরস্থানে প্রচুর ব্যবসায়ী ওই হালখাতা কিনেই বর্ষবরণ করেন। তবে আগের দিনের মতো এখন আর চাহিদা তেমন নেই বলে জানিয়েছেন ওই হালখাতার ব্যবসায়ীরা। অনেকেই তাই ব্যবসাও বদলে ফেলছেন। তবে, পুরনো দিনের হালখাতার ক্রেতা-বিক্রেতারা আজও বেঁচে আছেন স্মৃতি আঁকড়ে।
বাংলা নববর্ষের সন্ধ্যা মানেই হালখাতা ও মিষ্টিমুখ। সারা বছর গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে পুরনো ধারদেনা চুকিয়ে নতুন খাতার সূচনা করাই বাঙালি ব্যবসায়ীদের রীতি। তাই নতুন খাতায় নববর্ষের হিসেবের সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীদের কাছে এ এক শুভ দিন। তাই বছরের শুরুতেই ঠাকুরের পুজোর সঙ্গে খেরোর খাতাকে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে পুজোও করা হয়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে মোঘল আমল থেকে বাঙালি ব্যবসায়ীদের কাছে খেরোর খাতার প্রচলন রয়েছে। আগেকার দিনে জমিদারি থেকে শুরু করে ছোট বড় ব্যবসায়ীদের মনোযোগের সঙ্গে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখে রাখা নিত্যদিনের হিসেবের অভ্যাসের কথা কারও অজানা নেই। তবে কালের নিয়মে বাঙালি ব্যবসায়ীদের খেরোর খাতা বাঙালির বিবর্তনের ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রমাণ। প্রথম দিকে দিস্তে কাগজ বাঁধাই করে, তার উপর এক টেকসই কাপড় জড়িয়ে তৈরি হতো খেরোর খাতা। পরে অবশ্য খরচ কমাতে লালশালু মুড়েই তৈরি হয় এই খাতা।
বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়ী কম্পিউটারেই হিসেব রাখেন। যদিও হালখাতা বেঁচে রয়েছে নস্টালজিক বাঙালির হাত ধরেই। তবে দোকানে দোকানে সন্ধ্যা বেলায় গিয়ে নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার নেওয়ার যেমন দিন শেষ হয়েছে, ঠিক তেমনই আস্তে আস্তে দিন ফুরাতে চলেছে এই হালখাতারও। শিলিগুড়ির মহাবীরস্থানে বেশকিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হালখাতা বানিয়ে বিক্রি করেন। এক ব্যবসায়ী মহম্মদ আসিফ বলেন, আমরা আগে যে হারে হালখাতা তৈরি করতাম, বর্তমানে তার অর্ধেকেরও কম তৈরি করি। বেশকিছু পুরনো ক্রেতা তা কেনেন। তবে সেই অর্থে বাজার নেই। নিজস্ব চিত্র।