• ধুলিয়ানে ফিরছেন ঘরছাড়ারা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে প্রশাসন
    বর্তমান | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • অভিষেক পাল, সামশেরগঞ্জ: এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই ঘরে ফেরা শুরু করেছেন ধুলিয়ানের বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই ঘরছাড়া ১৯জন নিজেদের বাড়ি ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিসের শীর্ষ আধিকারিকরা। বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেছেন তাঁরা। তবে আড়ম্বর ছাড়াই আজ, মঙ্গলবার বাড়িতে পুজো করে নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন অনেকে। উল্লেখ্য, অশান্তির জেরে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল ধুলিয়ানের বেশ কিছু পরিবার। বাড়ি ফিরে স্বস্তি পেয়েছেন তাঁদের অনেকে।

    সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম বলেন, ‘মুর্শিদাবাদে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। যাঁরা ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁরা একে একে ঘরে ফিরে আসছেন। জঙ্গিপুরে ধীরে ধীরে দোকানপাট খুলছে। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেন, গত ৩৬ ঘণ্টায় মুর্শিদাবাদে অশান্তির খবর নেই। ২০০জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘরছাড়াদের মধ্যে ১৯জন ফিরে এসেছেন। আরও শতাধিক ব্যক্তি শীঘ্রই ফিরবেন। পুলিস বিএসএফ, সিআরপিএফ মোতায়েন রয়েছে। যৌথভাবে টহলদারি চলছে। 

    সামশেরগঞ্জ থানার অন্তর্গত ধুলিয়ান শহর থেকে নদী পার হয়ে মালদহের বৈষ্ণবনগরের একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশো বাসিন্দা। তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর করার পাশাপাশি কয়েকজনে ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। তবে এদিন অনেকেই বাড়িতে ফিরেছেন। ধুলিয়ান শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়াতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিসের শীর্ষ আধিকারিকরা টহল দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরাও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। আতঙ্কের পরিবেশ নেই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলেই দাবি করছে পুলিস। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। 

    জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, পুলিস সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় গণ্ডগোল তাড়াতাড়ি ঠেকানো গিয়েছে। ঘরছাড়া অনেকেই ঘরে ফিরছেন। সব মানুষই খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসবেন। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। সবকিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাজ্য সরকার রয়েছে। আমরা সর্বতোভাবে এই সমস্যা ঠেকানোর চেষ্টা করেছি। অনেকেই নানারকম গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তা থেকে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কেউ গুজব ছড়াবেন না। পুলিস ও প্রশাসন মানুষের সঙ্গে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। পাশেই গঙ্গা। প্রতি বছর বর্ষার সময় ভাঙন শুরু হলে আমাদের অন্যত্র গিয়ে উঠতে হয়। তাই এলাকায় সমস্যা শুরু হওয়ায় ঘর তালাবন্ধ করে অন্যত্র চলে যাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে এলাকায় ফিরলাম। আমরা খেটে খাই। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আর কতদিন থাকব? ধুলিয়ান শহরের বাসিন্দা এক মহিলা বলেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বাড়িতে পুজো করি। তাই সোমবার বিকেলেই ঘরে ফিরলাম। এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরুক। নতুন বছরে এই কামনা করব। এদিন ধুলিয়ানের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দীননারায়ণ ঘোষসহ অন্যান্য আধিকারিকরা। প্রায় শতাধিক পরিবারের হাতে প্রশাসনের তরফ থেকে রিলিফ কিট তুলে দেন তাঁরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলেই মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। দীননারায়ণবাবু বলেন, গতকালের ১৯ জনের পর আরও ৪৯ জন ঘরে ফিরছেন। আমরা সকলকে আশ্বস্ত করছি, আতঙ্কের কিছু নেই। জেলা প্রশাসন সকলের পাশে আছে। আমরা রিলিফ কিট তুলে দিচ্ছি। দু’টি কমিউনিটি কিচেনও চলছে এলাকায়।  রিলিফ কিট তুলে দিচ্ছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)