আসানসোলে খোল, করতাল বিলি করে সম্প্রীতি বজায় রাখার ডাক মন্ত্রী মলয়ের
বর্তমান | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ‘সম্প্রদায়ের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে ফায়দা লোটা বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। অন্য সংস্কৃতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের সেটা বুঝে রুখে দাঁড়াতে হবে। নগর সংকীর্তন, হরিনাম সংকীর্তন বাংলার চিরন্তন সংস্কৃতি। তা রক্ষা করতে হবে প্রসারিত করতে হবে’। সোমবার আসানসোলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে গিয়ে খোল, করতাল বিলি করার সময়ে মাইক হাতে এই মন্তব্য করেন রাজ্যের শ্রম ও আইনমন্ত্রী। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের মোকাবিলায় হরিনাম সংকীর্তনেই আস্থা রাখল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই খোল, করতাল বিলি ঘিরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে উৎসাহ ধরা পড়েছে। যা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে গেরুয়া শিবিরের।
বিজেপি জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, হিন্দুরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাই তাঁদের হাতে খোল করতাল ধরিয়ে দিয়ে জেহাদিদের জন্য ময়দান ফাঁকা করার চেষ্টা হচ্ছে।
আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেসের এই হরিনাম সংকীর্তনকে প্রসারিত করার উদ্যোগ রীতিমতো সাড়া পড়েছে। আসানসোল প্রাচীন শহর নয়। কয়লা খনি ও রেল যোগাযোগকে সামনে রেখে শহরের বিকাশ। গ্রামীণ সংস্কৃতি যেমন গাজন থেকে হরিনাম সংকীর্তন আজও ঘটা করে পালন হয়ে আসছে রাজ্যের অন্যতম এই বৃহৎ শহরে। আসানসোল শহরের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর। সদ্য সেখানে ফ্ল্যাট কালচার শুরু হলেও বৈশাখ মাস জুড়ে ভোরে হরিনাম কানে আসে ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদেরও। হরিমন্দির, হরিনাম সংকীর্তন অনুষ্ঠান সবই হয়। এদিন মন্ত্রী সেখানে দাঁড়িয়েই হরিনাম সংকীর্তনের প্রাচীন ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তাঁদের প্রাচীন সংস্কৃতিকে ধরে রাখার ডাক দেন। ঘুরিয়ে অবাঙালি সংস্কৃতির মাথা চাড়া দেওয়া ও ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টাকে তীব্র আক্রমণ করেন। হাততালি দিয়ে মানুষ সমর্থন জানান। এই ঘটনা হয় ২২ নম্বর ওয়ার্ডের লোয়ার কুমারপুরেও। মন্ত্রী এদিন শীতলা এলাকাতে গিয়েও খোলা কত্তাল বিলি করেন। উৎসাহিত মানুষ। খোল, করতালের পাশাপাশি হারমোনিয়ামেরও দাবি জানান। মন্ত্রী মাইক হাতে ঘোষণা করেন তার ব্যবস্থাও করা হবে।
রাজনৈতিক মহলে মতে, তৃণমূল বাংলার ধর্মীয় ঐতিহ্যের আঁতুড়ঘরে নতুন সাড়া জাগিয়েছে। উগ্র হিন্দুত্বের পাল্টা বৈশাখ মাস জুড়ে হরিনাম সংকীর্তনে মাততে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁদের দাবি, হরিনাম মানুষকে এক হওয়ার মন্ত্র দেয়। আসানসোলবাসী এই কর্মসূচিতে সাড়া দেওয়ার ঘটনাই তার প্রমাণ বহন করছে। জানা গিয়েছে, মন্ত্রী অফিসে এখন হরি ভক্তদের ভিড়। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে খোল, করতাল দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন। মন্ত্রীর অফিসের এক কর্মী বলেন, হরিনাম সংকীর্তন করা বহু মানুষের খোল, করতাল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা এসে নতুন খোল, করতালের জন্য আর্জি জানাচ্ছেন। মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ধর্মীয় বিভাজনের ফাঁদে আসানসোলবাসী পড়বে না। হরিনামকে সম্বল করে বহু শতাব্দী ধরে হিন্দু, মুসলিম এক হয়ে থেকেছে।