• রাতভর পালকি চেপে ঘোরেন দেবী সর্বমঙ্গলা, খোঁজ নেন গ্রামবাসীদের
    বর্তমান | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কান্দি: গ্রামের মানুষ কেমন আছেন, তা জানতে বছরে একটি দিন মন্দির থেকে বের হন দেবী! গভীর রাতে মশাল জ্বেলে তাঁকে পালকিতে চাপিয়ে গ্রাম ঘোরান হয়। কয়েকশো বছর পরেও ভরতপুর-১ ব্লকের জজানগ্রামে সেই ধারা অব্যাহত। প্রথা মেনে রবিবার রাতে অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলাকে শোভাযাত্রা সহকারে গ্রাম ঘোরালেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। ভোরের দিকে দেবীকে ফের মন্দিরে আনা হয়।

    বাসিন্দারা জানান, শুধু জজানগ্রামই নয়, এই এলাকার প্রতিটি গ্রামের আরাধ্যা দেবী সর্বমঙ্গলা। নিত্যপুজোয় স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় জমান। পাশাপাশি, দূর থেকেও বহু ভক্ত দেবীর কাছে মনস্কামনা পূরণের জন্য দরবার করেন। তবে দেবীকে বছরের মাত্র একটি দিন মন্দিরের বাইরে আনা হয়। বাংলা বছরের শেষের আগের দিন রাতে দেবীকে মন্দির থেকে বের করে গ্রাম ঘোরানো হয়।

    রবিবার রাত ছিল সেই বিশেষ মুহূর্ত। এদিন রাত ১২টা বাজতেই ঢাক-ঢোল নিয়ে দেবীকে পালকিতে চড়িয়ে গ্রাম ঘোরানো শুরু হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন কয়েক হাজার দর্শনার্থী। সামনে একজন মশাল জ্বালিয়ে দেবীকে পথ দেখাচ্ছিলেন। এভাবেই ভোর পর্যন্ত চলে দেবীর গ্রাম প্রদক্ষিণ। ভোরের আলো ফোটার আগেই দেবীকে ফের মন্দিরে আনা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সাগর চক্রবর্তী বলেন, এই রীতি বহু প্রাচীন। এক সময় আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মশাল জ্বালিয়ে দেবীকে গ্রাম ঘোরানো হতো। সেই রীতি আজও চালু রয়েছে। বাসিন্দা কবীর দত্ত বলেন, আধুনিক সময়েও এই রীতির কোনও নড়চড় হয়নি। আধুনিক প্রজন্মও এই রীতি বজায় রেখে চলেছেন।

    এদিকে, দেবীর গ্রাম প্রদক্ষিণের সময় প্রতিটি বাড়ির বাইরের দরজার কাছে প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মহিলাদের। তাঁরা প্রত্যেকে মশালের আগুন থেকে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখেন। মন্দিরের সেবাইত বিল্বমঙ্গল রায় বলেন, প্রথা অনুযায়ী দেবীকে গ্রাম ঘোরানোর হয়। এর অর্থ, গ্রামের কোন পরিবার কেমন আছে, তা দেবীকে দেখিয়ে নিয়ে আসা। এছাড়াও, মশালের আগুন থেকে প্রতিটি বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। তার অর্থ, প্রতিটি বাড়িতে মঙ্গলদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া। যাতে আগামী বছরের দিনগুলি সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়ে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা পুলক অধিকারী বলেন, এদিন রাতে কয়েক হাজার ভক্ত গ্রামে দেবীদর্শন করেছেন। আমাদের কাছে এই উৎসব দুর্গাপুজোর চেয়ে কিছু কম নয়।
  • Link to this news (বর্তমান)