সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মুর্শিদাবাদের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আগেভাগেই কড়া সতর্ক হল বীরভূম পুলিস। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনা এবং সেই ঘটনার প্রভাব যাতে বীরভূমে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে দুই জেলার সীমানায় নাকা চেকিং শুরু করেছে বীরভূম পুলিস। সীমানাবর্তী থানাগুলিতে সিসি ক্যামেরায় নজরদারি বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেখানে সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে দ্রুত একাধিক সিসি ক্যামেরা ইনস্টল ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম সীমানায় নাকা চেকিং চলছে। অধিকাংশ থানা এলাকায় সীমানাগুলিতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। যেখানে নেই সেখানে লাগানো হচ্ছে।
ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে মুর্শিদাবাদ জুড়ে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। আর সেই আন্দোলনের নামে পুলিসের গাড়িতে আগুন, বোমাবাজি, বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট সহ নানা অশান্তি শুরু হয়েছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া। স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিসও টহল দিচ্ছে। সেই হিংসার আঁচ যাতে কোনওভাবেই লাগোয়া বীরভূমে প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য আগে থেকেই সর্তক জেলার পুলিস কর্তারা।
বীরভূমের দশটি থানা এলাকা একেবারে মুর্শিদাবাদ লাগোয়া। যেমন মুরারই, পাইকর, নলহাটি থানা এলাকা লাগোয়া মুর্শিদাবাদের সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, জঙ্গিপুর থানা। অন্যদিকে মাড়গ্রাম, তারাপীঠ, মল্লারপুর, ময়ূরেশ্বর, লাভপুর, কীর্ণাহার, নানুর লাগোয়া মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ও বড়ঞা থানা এলাকা। তাই মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূমে প্রবেশ পথগুলিতে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা সীমানাগুলিতে পুলিসের পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সুতি থানা লাগোয়া পাইকরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রবিবার বিকেল থেকেই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিন পাইকরের বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে নজরদারি চালান রামপুরহাট মহকুমা পুলিস আধিকারিক গোবিন্দ সিকদার।
সেই সঙ্গে ওই সীমানায় কড়া নাকা চেকিং শুরু হয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, কয়েকটি থানার পক্ষ থেকে মুর্শিদাবাদ সীমানায় এখনও সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়নি। যেমন তারাপীঠের ব্রাহ্মনদিহি সীমানা। পুলিস কর্তাদের নির্দেশ পেয়ে সেখানে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি গাড়ি চেক করে তবেই বীরভূমে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে সংযোগকারী রাজ্য ও জাতীয় সড়কে নজরদারি বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সীমানা এলাকার গ্রামগুলিতে প্রচার শুরু হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, ওয়াকফ আইন বাতিলের প্রতিবাদে নিত্যদিন বীরভূমের কোথাও না কোথাও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের মতো পরিস্থিতি যাতে না হয়, তারজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করছে বীরভূম পুলিস।
অন্যদিকে সুতি থানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পাকুর জেলা। সেখান থেকে দুষ্কৃতীরা যাতে কোনভাবেই ঝাড়খণ্ড হয়ে বীরভূমে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য দুই রাজ্যের সীমানাতেও নাকা চেকিং জোরদার করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে সবরকমের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।