২০০ বছর ধরে গাজনের আয়োজন করছেন শেখ ভাইরা, ইন্দাসে সম্প্রীতির অনন্য নজির
বর্তমান | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: হিন্দুদের গাজন। কিন্তু দুই শতাব্দী ধরে সেই গাজনের প্রধান আয়োজক মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। ইন্দাসের গোবিন্দপুরে এমনই সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি করেছেন গ্রামের শেখ ভাইরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২০০ বছর ধরে চলে আসা গোবিন্দপুরের গাজন উৎসব দুই সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় শেখ পরিবারের পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠা করা শিবমন্দিরে হিন্দু পুরোহিত থাকলেও ঠাকুরের নিত্যপুজো থেকে শুরু করে উৎসব পরিচালনায় যাবতীয় ভার শেখ ভাইদের উপর পড়ে। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। রবিবার নিয়ম মেনে রাতগাজন হয়েছে। সোমবার দিনগাজন হয়। ৬৫জন ভক্ত সন্ন্যাসী হন। মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য মহিলারা ভিড় জমান। উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা মেতে ওঠেন।
গাজন উৎসবের অন্যতম পরিচালক তথা স্থানীয় করিষুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী শেখ জিয়া আলম বলেন, পূর্বপুরুষের প্রচলন করা গাজন উৎসবে যাবতীয় প্রস্তুতি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের পুরুষ ও মহিলারা মন্দিরে না ঢুকলেও উৎসব প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকে হিন্দুভক্ত ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পুজোর প্রসাদ গ্রহণ করেন। আমরা চাই এভাবেই সম্প্রীতির নির্দশন যুগ যুগ ধরে বজায় থাকুক।
শেখ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২০০ বছর আগে ইন্দাসের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনভাই শেখ ইয়াকুব, শেখ ইউসুফ ও শেখ এহিয়া পাত্রসায়রের রানির জঙ্গলে গোরুর গাড়িতে করে শুকনো পাতা কুড়োতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার সময় মেঠো রাস্তায় শুকনো পাতার বস্তা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই জঙ্গলে একটি বড়ো পাথর পড়ে থাকতে দেখে গাড়ি দাঁড় করান। পাথরটি তুলে গাড়ির উপরে চাপা দেন। তবে সেটি যে শিবলিঙ্গ তাঁরা প্রথমে বুঝতে পারেননি। গ্রামে ঢোকার মুখে শিবমন্দির প্রাঙ্গণে আসার পর গোরুর গাড়ি নিজে নিজেই থেমে যায়। অনেক পরে গাড়ি এগোয়। তবে ওইদিন রাতে এক ভাই স্বপ্নে দেখেন যে ওই শিবলিঙ্গ অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই মতো পরের দিন পুরোহিত ডেকে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই বছরই ঠাকুরের ইচ্ছায় চৈত্র মাসে গাজন উৎসব পালিত হয়। সেই থেকে আজও ধুমধাম সহকারে গাজন উৎসব হচ্ছে। শেখ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা উৎসব পরিচালনা করছেন। গাজন উপলক্ষ্যে শতাধিক ভক্ত সন্ন্যাসী হন। বেশকিছু দোকানও বসে। ভক্ত ছাড়াও সম্প্রীতির ওই মিলনস্থলে প্রচুর সাধারণ দর্শনার্থীও আসেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গোবিন্দপুরে প্রায় হাজার পরিবারের বাস। তারমধ্যে ৪০টি পরিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের। তাঁদের মধ্যে শেখ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা গাজন উৎসব পরিচালনা করছেন। তাই তা শেখ ভাইদের গাজন নামে এলাকায় পরিচিত। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য অটুট থাকায় একে অপরের উৎসবে সমানভাবে অংশ নেন। বাবা ভোলানাথের কাছে তাঁদের একটাই কামনা, কোনওরকম অশান্তির
উত্তাপ যেন তাঁদের সম্প্রীতিকে নষ্ট না করে। -নিজস্ব চিত্র