প্রতিবাদের নামে তাণ্ডবে অগ্নিগর্ভ ভাঙড় গাড়ি ভাঙচুর-ইটবৃষ্টি, জখম ৮ পুলিসকর্মী
বর্তমান | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জের ঘটনার রেশ এখনও চলছে। তার মধ্যে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে এবার অশান্ত হল ভাঙড়। আন্দোলনের নামে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। পুলিসের গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হল একাধিক বাইক। পুলিস কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। তাতে আটজন পুলিস কর্মী আহত হয়েছেন বলে খবর। এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার আগে এদিন সকালে পুলিসের সঙ্গে এক প্রস্থ গোলমাল বাধে আন্দোলনকারীদের। বাসন্তী হাইওয়ের উপর পুলিস লাঠিচার্জ করে ভিড় হটিয়ে দেয়। সেখানেও উর্দিধারীদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। এই ঘটনার জেরে সকাল থেকে বাসন্তী হাইওয়েতে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল যান চলাচল।
জানা গিয়েছে, এদিন আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকীর ডাকে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে কলকাতায় মিছিল ছিল। তাতে অংশ নিতে ভাঙড়, ক্যানিং পূর্ব ইত্যাদি জায়গা থেকে ছোট ছোট গাড়ি করে বাসন্তী হাইওয়ের উপর দিয়ে কলকাতা যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন আইএসএফ কর্মীরা। ঘটকপুকুরের কাছে বৈরমপুরে পুলিস ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয়। এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ। অনেকেই রাস্তায় বসে পড়েন। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তা। পুলিস আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। এর মধ্যেই উত্তেজিত কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিস লাঠিচার্জ করে ভিড় ছত্রভঙ্গ করে। এরপরই আন্দোলনকারীরা পুলিসকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। বিকেলের দিকে বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ মুক্ত হয়।
অন্যদিকে, এদিন বিকেলে উত্তর কাশীপুর থানার শোনপুরে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে আইএসএফ। কিন্তু সেখানেও আচমকা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিসকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইট ছোড়ে আইএসএফ সমর্থকরা। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। পোস্টে লাগানো সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়। পরে শুরু হয় উত্তেজিত কর্মীদের তাণ্ডব। একটি প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর করে উল্টে দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচটি বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। এদিকে, ইটের আঘাতে আট পুলিসকর্মী জখম হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিসের জয়েন্ট সিপি ক্রাইম ও ট্রাফিক রূপেশ কুমার। এরপরই পুলিসের বিশাল বাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে প্রতিবাদকারীদের হটিয়ে দেয়। গোলমাল থামলেও এখনও ওই অঞ্চল থমথমে। আন্দোলনের নামে আইএসএফের এই তাণ্ডব নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল। পাল্টা নৌশাদ বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় সঙ্গে আইএসএফের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্য কেউ দলের নাম করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে কলকাতায় যে মিছিল হয়, তাতে ভালোই ভিড় হয়েছিল। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ মল্লিকবাজারগামী বাস বন্ধ করে দেয় পুলিস। বেশকিছু গাড়িকে এম জি রোড ধরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। শিয়ালদহ, মৌলালি এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।