চাকরিহারা শিক্ষকেরা না আসলে রয়েছে স্কুলের পঠনপাঠন পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার শঙ্কা। আবার তাঁরা স্কুলে এসে হাজিরা খাতায় সই করলে আদালত অবমাননা করা হচ্ছে না তো, একাংশ প্রধান শিক্ষকের মধ্যে দেখা দিয়েছে সেই শঙ্কাও! ফলস্বরূপ পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক স্কুলে দেখা গিয়েছে, প্রধান শিক্ষকেরা চাকরিহারাদের জন্য বানিয়েছেন আলাদা হাজিরা খাতা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্তত ৬০০ জন শিক্ষাকর্মী। গত ৩ এপ্রিল ওই রায়ের পর এঁদের একটা বড় অংশ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছেন। আবার কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুলে যাচ্ছেন। জেলার কয়েকটি এলাকার স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা উপস্থিতির খাতায় তাঁদের সই করাতে ভয় পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। দাবি, তাঁরা অন্য হাজিরা-খাতা এনেছেন এ জন্য।
ওই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, আদালত যে শিক্ষকদের বাতিল বলেছে, সেই সমস্ত শিক্ষকদের কাজে যোগদান করালে আইনি সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। উল্টো দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশও অমান্য করতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘শীর্ষ আদালতের রায়ের কপিও পেয়েছি ওয়েবসাইট থেকে। কিন্তু রায়ের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে ওই সমস্ত শিক্ষকদের কাজে রেখে দেওয়ার বা বাতিলেরও কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক খুঁজে নিয়েছেন নতুন পন্থা। তাঁরা একটি নতুন হাজিরা খাতা তৈরি করে সেখানেই সই করিয়ে নিচ্ছেন। কোলাঘাটের গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠে চাকরি হারিয়েছেন দুই শিক্ষক এবং তিনজন শিক্ষাকর্মী। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পর শুক্রবার থেকে তাঁরা স্কুলে আসছেন। প্রধান শিক্ষক সঞ্জয়কুমার মাইতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা ও আদালতের রায়ের মধ্যে গভীর সঙ্কটে পড়েছি। ওই সমস্ত শিক্ষকদের উপস্থিতির খাতায় স্বাক্ষর করালে আইনত আমি আদালতের রায়কে অবমাননা করছি। কিন্তু আমি মুখ্যমন্ত্রীর বার্তাকেও উপেক্ষা করতে পারি না। যে কারণেই নতুন খাতা তৈরি করে ওঁদের সেই খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করাচ্ছি। ভবিষ্যতে রায় ওঁদের তরফে এলে বিদ্যালয় যেমন শিক্ষক শূন্যতা থেকে বেঁচে যাবে, তেমনই আইনি জটিলতার আশঙ্কা থেকেও আমরা বাঁচব।’’
বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজার চেষ্টা করবেন পাঁশকুড়ার কুমারচক এস কে বিদ্যাআয়তনের প্রধান শিক্ষক মানসকুমার মাইতিও। তাঁর স্কুলে এক শিক্ষক এবং দু’জন অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি গিয়েছে। মানস বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ওঁরা কাজে যোগ দিতে এলে বাধা দেব না। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে কোনও নির্দেশিকা না এলে হাজিরা খাতায় আমরা সই করতে দিতে পারি না ওঁদের। বিকল্প কিছু ব্যবস্থা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।’’ পটাশপুরের বারবাটিয়া হাই স্কুলের চারজন শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে চাকরিহারা শিক্ষকেরা আসছেন। তবে তাঁরা কোন খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করছেন, তা প্রকাশ্যে বলব না।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পলাশ রায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা এলে তা প্রধান শিক্ষকদের কাছে দ্রুত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’