• সময় বদলেছে, তবে বাংলা নববর্ষে আজও বেস্টসেলার পঞ্জিকা
    এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে যাঁরা কাছের মানুষ, তাঁদের উপহার দিতে স্পেশ্যাল প্যাকেটের ব্যবস্থা করেছে কলকাতার এক প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন বিপণি। চওড়া প্যাকেটের বাঁ দিকের খোপে একটি কাঠের পেঁচা, মধ্যের খোপে বাংলার কুলোর আকারের একটি বড় সন্দেশ। ওই সন্দেশে লেখা ‘শুভ নববর্ষ’। আর ডান দিকের খোপে রাখা একটি পঞ্জিকা — আটপৌরে কথায় যাকে পাঁজি বলে।

    বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় নাম থাকে না তাদের। তবে বহু বছর ধরেই বাংলা বইয়ের অবিসংবাদিত বেস্টসেলার ওরাই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘গার্হস্থ্য’, ‘ফুল’, ‘ডাইরেক্টরি’ এবং ‘পকেট’–এর রূপ বদল করে ওরা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘অ্যাপ–বেসড’ পর্যন্ত হয়েছে। বাংলা নববর্ষে অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের আবহে ওদের চাহিদা চরমে ওঠে। ওরা পাঁজি।

    মানুষ পৃথিবীর সীমা কাটিয়ে মঙ্গলে নামার তোড়জোড় শুরু করলেও শুভ দিন দেখার জন্য এখনও পাঁজির শরণাপন্ন হয় গোটা বাংলা। ১৪৩২ বঙ্গাব্দেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিয়ালদহ মার্কেট এবং কলেজ স্ট্রিটের বিভিন্ন দোকানে কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে পাঁজির বিক্রি।

    লাল কাপড়ে মোড়া যে হালখাতা বছরের পর বছর ধরে বাংলা নববর্ষের ট্রেডমার্ক হিসেবে পরিচিত ছিল। তার ব্যবহার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে। তবে পাঁজি? ‘এখনও পর্যন্ত পাঁজির বিক্রি কিছুমাত্র কমেনি, বরং বেড়েছে’, এমনটাই দাবি গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার অরিজিৎ চৌধুরীর। নববর্ষের প্রাক্কালে তিনি ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘আমার হিসেব, বছরে অন্তত ১৮ থেকে ২০ লক্ষ পাঁজি বিক্রি হয় গোটা বাংলায়। বিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি শুভ দিন দেখার জন্যই হয়তো পাঁজির বিক্রি একটুও কমেনি।’

    একই মত সর্বভারতীয় ব্রাহ্মণ পরিষদের প্রাক্তন সম্পাদক রঞ্জন পাঠকেরও। তিনি বলছেন, ‘পঞ্জিকা আসলে পঞ্চাঙ্গ। এখান থেকে আমরা পাঁচটি বিষয়ে জানতে পারি। এগুলো হলো তিথি, নক্ষত্র, যোগ, করণ এবং বার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্জিকার কলেবর বদলে ব্যবহারকারীর উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে।

    পুরোহিতরা ব্যবহার করেন ‘ডাইরেক্টরি’ পঞ্জিকা, সাধারণ মানুষ বাড়িতে রাখেন ‘ফুল’ পঞ্জিকা বা ‘গার্হস্থ্য’ পঞ্জিকা। অনেকেই সঙ্গে ‘পকেট’ পঞ্জিকা রাখেন। রাস্তা–ঘাটে কাজে লাগলে সেটাই ব্যবহার।’ এখন তৈরি হয়েছে অ্যাপ–বেসড পঞ্জিকাও। অরিজিৎ চৌধুরী জানাচ্ছেন, তাঁরা বই আকারে পঞ্জিকা বিক্রির পাশাপাশি পিডিএফ ফাইলেও পঞ্জিকা বিক্রি করেন। আকারের উপর নির্ভর করে পাঁজির দামও বিভিন্ন — ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে বাংলা তার অনেক পুরোনো অভ্যাসকেই ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ছেড়েছে সাবেকি পোশাক, নিজস্ব খাবারের পদও। তবে এখনও সেই আধুনিকতা প্রভাব ফেলতে পারেনি পঞ্জিকার উপর। চৈত্র ফুরোনোর পালা এলেই খোঁজ পড়ে পাঁজির। বিয়ে–পৈতে–অন্নপ্রাশন তো আছেই, রয়েছে বাঙালির তেরো পার্বণও।

    পাঁজি ছাড়া সে সব হয় নাকি!

  • Link to this news (এই সময়)