• ৪২৩ জন শিক্ষকের পুরনো কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা
    এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: ২৬ বছর বয়সে প্রথম এসএসসি দিয়ে পুরুলিয়ার প্রান্তিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন কেষ্টপুরের বাসিন্দা সুনেত্রা সেনগুপ্ত। সেটা ২০০৯ সাল। ২০১৬ সালে ফের এসএসসিতে বসেন সুনেত্রা। নানা গোলযোগের পরে ২০১৯ সালে তিনি চাকরি পান দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের একটি স্কুলে। বর্তমানে একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রায় ২০০ জন পড়ুয়াকে একাই পড়াতেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই দিদিমণি।

    সুপ্রিম রায়ের পরে তাঁর চাকরি গিয়েছে। কিন্তু স্বস্তি একটাই, আদালতের নির্দেশে বলা আছে, তিনি এবং তাঁর মতো আরও এমন অনেক শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী রয়েছেন, যাঁরা পুরোনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু সুনেত্রাকে গ্রাস করেছে চিন্তা। তাহলে কি আবার পুরুলিয়া ফিরে যেতে হবে?

    সুনেত্রার কথায়, ‘আমার উপরেই ছ’বছরের মেয়ের দায়িত্ব। বাড়িতে প্রবীণ বাবা–মা, শ্বশুর–শাশুড়ি আছেন। দূরত্বটা কমাবো বলেই তো ২০১৬–র এসএসসিতে বসেছিলাম। এখন কী করব?’ সুনেত্রার মতো শয়ে শয়ে শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে সংশয়, ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে। এমন ৪২৩ জন শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সব দিক খতিয়ে দেখে এই আবেদনকারীদের পুরোনো কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ–আদালত। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর।

    পশ্চিম বর্ধমানের একটি স্কুলের একাদশ–দ্বাদশের শিক্ষক সুনীল ঘোষের বয়স এখন ৫৪ বছর। তিনি এসএসসি দিয়ে প্রথম চাকরি পেয়েছিলেন ২০০৯ সালে। তারপরে অবশ্য বাড়ি থেকে কাছে পোস্টিং পাওয়ার জন্য চারবার এসএসসি দিয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রতিবারই এসএসসি পাশ করার পরে দূরে পোস্টিং হচ্ছিল বলে তিনি জয়েন করেননি।

    অবশেষে ২০১৬ সালে বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে পোস্টিং পান, পদোন্নতিও হয়, তিনি জয়েন করেন। সুনীল বলছেন, ‘পুরোনো স্কুলে ফিরে যেতে হলে সেই জার্নি করার মতো শক্তি এখন নেই। ঠিক করেছি ১৬ বা ১৭ এপ্রিল সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করে স্কুল শিক্ষা দপ্তরে জমা করে আসব।’

    সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ থেকে বিটিএ, প্রধান শিক্ষকদের নানা সংগঠন থেকে পুরোনো কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেন এমন শিক্ষক–শিক্ষিকারা বার বার চিঠি–মেল পাঠিয়েও কোনও উত্তর পাননি। কবে থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে দপ্তরের কর্তারা কিছু জানাতে পারেননি। শুধু বিকাশ ভবনের এক সূত্রের দাবি, যতদিন না কোনও ডেভেলপমে‍ন্ট হচ্ছে, ততদিন এই প্রক্রিয়া শুরু করা মুশকিল।

    পুরোনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, এমন শিক্ষকদের দাবি, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট পোস্টিংয়ের কথা কিছু বলেনি, তাই যে যেখানে কর্মরত রয়েছেন, সেখানেই তাঁদের রেখে দেওয়া যেতে পারে। আবার এমন একদল শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী রয়েছেন যাঁরা ২০১৬ সালের চাকরি পাওয়ার পরে নানা সরকারি দপ্তরে চাকরি পেয়েছেন।

    তাঁরা চাইছেন, তাঁদের কথাও ভেবে দেখুক আদালত এবং সরকার। অনেকেই দাবি তুলছেন, তাঁদেরও জয়েন করার সুযোগ করে দিতে। যদিও আদালতের রায়ে রয়েছে, আগে জয়েন করেছিলেন এমন প্রার্থীরাই পুরনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারবেন।

  • Link to this news (এই সময়)