• সঙ্কট কাটাতে স্কুল আসবে কলেজের ছাতার তলায়? আলোচনায় শিক্ষক সংগঠনগুলি
    এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: এমনিতেই অনেকদিন স্কুলে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। তার উপরে সুপ্রিম-রায়ে এক লপ্তে এসএসসি–র প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে গিয়েছে। রাজ্যজুড়ে স্কুলশিক্ষা কার্যত বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে। এরই মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের সেমেস্টার পরীক্ষা শুরুর আর পাঁচ মাসও বাকি নেই।

    রয়েছে নিচু ক্লাসের সামেটিভ এগজ়ামও। এই অবস্থায় কী হবে স্কুলগুলির, কী ভাবে পড়াশোনা চলবে? এই উত্তরের আশায় যখন পরিত্রাণের নানা উপায় খুঁজছেন প্রধান শিক্ষকরা, তখনই শিক্ষাকর্তাদের অনেকে ভাবছেন, এই অবস্থায় শিক্ষকরাই ‘সমাধান’ হয়ে উঠতে পারেন।

    আর এর জন্য স্কুল থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়— সমস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কাছেই তাঁদের অনেকের আবেদন— ‘আপনারা স্কুলগুলির পাশে এসে দাঁড়ান। স্কুলের শিক্ষকরা নিজেদের স্কুলের পাশাপাশি পাশের স্কুলেরও খোঁজ নিন, ক্লাস করান। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এগিয়ে আসুন উচ্চশিক্ষা ক্যাম্পাসের গণ্ডি পেরিয়ে। ফাঁকা সময়ে ক্লাস নিন স্কুলের খুদে পড়ুয়াদেরও।’

    আপাতত সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমেই এই বিপর্যয়কে রোখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিক্ষক-সমাজেরও অনেকেই। বিকাশ ভবনের কর্তাদের একাংশ বলছেন, রাজ্য সরকারের নয়া শিক্ষানীতি অনুযায়ী, ইতিমধ্যে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এক ছাতার তলায় এনে ‘হাব অফ লার্নিং’ গড়ে তোলা হয়েছে।

    তাতে কলেজগুলোকে হাব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব নিকটবর্তী স্কুলগুলির দায়িত্ব নেওয়া। রাজ্যে এক লপ্তে হাজার হাজার বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক–শিক্ষিকার চাকরি চলে যাওয়ায়, সেই বিষয়টি কার্যকর করা যেতেই পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাকর্তাদের অনেকে।

    এই উদ্যোগে কোনও কলেজের কাছাকাছি থাকা স্কুলগুলির পড়ুয়ারা সংশ্লিষ্ট কলেজে গিয়ে ক্লাস করতে পারে। আবার কলেজের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে হাতে–কলমে শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে। সরকারি ভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘হাব-স্পোক সিস্টেম’। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থাই বিপর্যয় মোকাবিলার প্রধান হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা। এতে সায় রয়েছে শিক্ষক সমাজেরও একটা বড় অংশেরই। যদিও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও তো শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ন্ত!

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘সত্যিই স্কুলে স্কুলে এই সঙ্কটের সময়ে কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পড়ুয়াদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত। সামাজিক দায়িত্ব পালনে শিক্ষকরা অবশ্যই কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিতে পারেন। তবে খুব দূরে ও প্রান্তিক এলাকায় গিয়ে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে।’

    দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া কলেজ অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ (এআইকুটা) সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথের কথায়, ‘আমরা সব সময়ে যোগ্য শিক্ষকদের পাশেই আছি। তাই ওঁদের স্কুলের পড়ুয়াদের বিপদে আমরা সর্বতো ভাবে শিক্ষার অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চাই। যে কোনও প্রয়োজনে যে সব স্কুলে একাধিক শিক্ষক–শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে, সেখানে গিয়ে আমাদের সংগঠনের সদস্য কলেজ শিক্ষকরা যাতে ক্লাস নেন, তা নিয়ে মঙ্গলবারই আলোচনায় বসব।’

    ওয়েবকুপার সহ–সভাপতি সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্কুলে চাকরি বাতিলের ফলে শিক্ষক সঙ্কটের কথা ভেবে ইতিমধ্যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘আমরা আইন বাঁচিয়ে স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের সঙ্কট মেটাতে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতেই পারি। তা নিয়ে সংগঠনে আলোচনা জরুরি।’ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, তারা শিক্ষক সঙ্কট মোকাবিলা করতে ক্লাস্টার স্কুলের ব্যবস্থা করছে।

    যেখানে পাশাপাশি অনেকগুলি স্কুল এক হয়ে পড়ুয়াদের কমন ক্লাস করাবে। এই স্কুলের শিক্ষক এবং পড়ুয়া অন্য স্কুলে গিয়ে পড়াবেন বা পড়বে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অবশ্য আপাতত সুপ্রিম কোর্টে রায়ের পুনর্বিবেচনার আপিল নিয়েই ব্যস্ত। সেখানকার এক কর্তার কথায়, ‘পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর কর্তব্য সকলেরই। আমরা আপিলের পরে এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই ভাববো। তবে আমাদের আশা, কোর্টই আমাদের রাস্তা বাতলে দেবে।’

  • Link to this news (এই সময়)