সংশোধিত ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে এ বার কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিল মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড।
‘মসজিদ বাঁচাও, মাদ্রাসা বাঁচাও, কবরস্থান বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ২৬ এপ্রিল ওই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদকে ঘিরে অশান্তি ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ-সহ কয়েকটি জেলার কিছু অংশে। এই প্রেক্ষিতে পার্সোনাল ল বোর্ডের তরফে আবেদন জানানো হয়েছে আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য। পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মৌলানা ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি বাংলায় অশান্তির ঘটনায় নিহত তিন জনের পরিবারের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণের দাবিও তুলেছেন। প্রসঙ্গত, শ্রমিক ও কৃষকদের একগুচ্ছ দাবি নিয়ে আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে সিপিএমের কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিক ও বস্তি সংগঠন। নিয়োগ-দুর্নীতির জেরে প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনার প্রতিবাদও জুড়ে নেওয়া হয়েছে সেখানে। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ডাকের ফলে এপ্রিলের শেষার্ধে দুই সপ্তাহে দু’টি ব্রিগেড সমাবেশ হতে চলেছে।
মুর্শিদাবাদে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদকে ঘিরে গোলমালে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে সোমবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ধুলিয়ানের জাফরাবাদে খুন হওয়া বাবা-ছেলে ছিলেন সিপিএম সমর্থক। ধুলিয়ানে তাঁদের বাড়িতে সেলিমের সঙ্গে গিয়েছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, দলের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা প্রমুখ। পরে তাঁরা গিয়েছিলেন সুতি থানার কাসেমনগরে নিহত ২১ বছরের তরুণের বাড়িতেও। সিপিএম নেতৃত্ব যাওয়ায় এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ, ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীও। সেলিম বলেছেন, ‘‘বিজেপির সাম্প্রদায়িক উস্কানি, তৃণমূল সরকারের মদত ও ব্যর্থতার পরিণতি এই মৃত্যু। বাংলায় ধর্ম, জাতের নামে ভাগাভাগি আটকাতে প্রাণ দিয়েই লড়াই চালিয়ে যাবেন আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এখন এত পুলিশ, তখন কোথায় ছিল? এর দায় পুলিশমন্ত্রীকে নিতে হবে। আগুন লাগিয়েছে, দোকান-ঘর লুট করেছে। আগুন পাড়ার ছেলেরা নিভিয়েছে, তা-ও দমকল আসেনি।’’
ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিতে এ দিনই শিয়ালদহ থেকে এন্টালির রামলীলা পার্ক পর্যন্ত মিছিল হয়েছে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) ডাকে। জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পরে জমায়েতে আইএসএফ চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী আহ্বান জানিয়েছেন, ওয়াকফ এবং সংবিধান বাঁচাতে গণতান্ত্রিক পথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। ছিলেন প্রসেনজিৎ বসু-সহ অন্য নেতারা। শিয়ালদহে মিছিলে আসার পথে আইএসএফ সমর্থকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগে এ দিন ভাঙড় ও বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ের উপরে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ধুন্ধুমার বেধেছিল। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীরা কলকাতায় প্রতিবাদের ডাক দিলে অসুবিধা নেই কিন্তু নওসাদ দিদ্দিকীরা প্রতিবাদ করলে আপত্তি! অদ্ভুত সরকার এবং তার পুলিশ!’’
মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতিকে সামনে রেখে বিজেপি এবং তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে রেখে সরব হয়েছে সিপিআই-ও। এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত, সর্বদল বৈঠক, প্রয়োজনে কিছু এলাকায় কার্ফু জারি, নিহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছে তারা। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “২০২৬-এর ভোটের দিকে তাকিয়ে, মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে ভুলিয়ে দিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করছে। বাংলা সম্প্রীতির পীঠস্থান ছিল। এখন দু’টি সম্প্রদায়েরই মৌলবাদীরা বিজেপি ও তৃণমূলের আশ্রয়ে সামনে চলে এসেছে।” আইনি লড়াই এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার বার্তাও দিয়েছেন সিপিআই নেতৃত্ব।
তৃণমূল অবশ্য হিংসার পিছনে বিজেপি ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘প্রত্যেকটি ঘটনা একই কায়দায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটেছে। এবং ঘটনার পরেই তার ভিডিয়োও বাজারে ছড়িয়েছে। পরিকল্পিত না হলে কী ভাবে এটা সম্ভব? মনে হচ্ছে, কেউ যেন ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছবি তোলার জন্য!’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘অন্য রাজ্যের একাধিক ছবি এ রাজ্যের বলে চালানোর চেষ্টা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরে মিথ্যা ধরে ফেলায় তা মুছে দেন তিনি।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের নির্দিষ্ট অভিযোগ, পড়শি দেশে যারা অশান্তি করেছিল, তাদের ঢুকিয়ে এ পারে অশান্তির পথ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমরা বিএসএফের ভূমিকার তদন্ত চেয়েছি।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত যদিও বলেছেন, ‘‘অন্য রাজ্যের ভিডিয়ো দিয়ে আমি কোথাও দাবি করিনি, সেগুলি এ রাজ্যের। সব জায়গাতেই এরা এক রকম আচরণ করে, সেটাই বোঝানো হয়েছে।’’