পড়ুয়ার তুলনায় এমনিতেই শিক্ষকের সংখ্যা কম। তার উপরে শীর্ষ আদালতের রায়ে চাকরি বাতিল হয়েছে পাঁচ জন শিক্ষক এবং এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর। ২০১৭-এ রাজ্য সরকারের দেওয়া ‘সেরা স্কুলের’ তকমা পাওয়া পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয় পড়েছে আতান্তরে। কী ভাবে এই সঙ্কট সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে শনিবার স্কুলের পরিচালন সমিতি বৈঠক করে। তাতে ঠিক হয়, আপাতত শিক্ষকেরা বাড়তি দায়িত্ব নেবেন। গ্রীষ্মের ছুটির পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১৯৫২-এ তৈরি এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা তিন হাজার একশোর বেশি। ২০১৩-এ এই স্কুল থেকে মাধ্যমিকে যুগ্ম ভাবে প্রথম স্থান অধিকার করে সৌরাশিস পাল। ২০১৮-এ এই স্কুলের পড়ুয়া অরিত্রিকা পাল মাধ্যমিকে ষষ্ঠ হয়। ২০১৭-এ রাজ্য সরকার ‘সেরা স্কুলের’ পুরস্কার দেয় এই স্কুলকে। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও সুনাম রয়েছে স্কুলের। নুপুর সরকার এবং পামলিকা দত্ত নামে স্কুলের দুই ছাত্রী জাতীয় স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করেছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ১২টি। তার উপরে পাঁচ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁরা আর স্কুলে আসছেন না। শিক্ষকের সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৬। স্কুলের দাবি, চাকরি বাতিলের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা সকলেই কলা বিভাগের। এডুকেশনের জন্য ছিলেন এক জন শিক্ষক। তিনি স্কুলে না আসায় এই বিষয়টি কে পড়াবেন তা নিয়ে চিন্তিত কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকেরা জানান, ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করার কারণে স্কুলের প্রতি আস্থা বেড়েছে এলাকাবাসীর। তা কী ভাবে ধরে রাখা যাবে, তা নিয়েও ভাবছেন শিক্ষকেরা।
এ দিন পরিচালন সমিতির বৈঠকের পরে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রত সামন্ত জানিয়েছেন, শিক্ষকেরা বাড়তি দায়িত্ব নেবেন। ৩০ এপ্রিল থেকে গরমের ছুটি পড়ছে। তার পরে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রীষ্মের ছুটির পরে স্কুল খুললে ওই ছ’জন স্কুলে ফিরবেন কিনা, সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তার পরে যদিও সমস্যা না মেটে সে ক্ষেত্রে কয়েক জন অস্থায়ী শিক্ষক নেওয়া হবে। প্রধান শিক্ষকের দাবি, বর্তমানে স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক, ‘গ্রুপ ডি’ ও ‘গ্রুপ সি’ মিলিয়ে ন’জন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের স্কুলের তহবিল থেকে সাম্মানিক বাবদ কিছু অর্থ দেওয়া হয়। এর পরে আরও অস্থায়ী শিক্ষক নিতে গেলে স্কুলকে অন্যদের সাহায্য নিতে হবে।
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যামসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এমনিতেই পড়ুয়া অনুপাতে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কম। তার উপরে পাঁচ জন চলে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। শিক্ষকেরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। শিক্ষাকর্মীদের দিয়েও দু’য়েকটি ক্লাস করানোর কথা ভাবা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ে পড়ুয়াদের অবিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক হবে।