এই সময়, কালনা: বাংলা নববর্ষ মানেই সারাদিন ধরে হালখাতার ব্যস্ততা। হাসিমুখে দোকান থেকে বেরিয়ে আসছেন গ্রাহক, হাতে মিষ্টির বেশ বড় আকারের বাক্স। সারা বছর ধরে যাঁদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ, সেই খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না ব্যবসায়ীরাও।
এটা গত বছর পর্যন্ত ছিল পরিচিত ছবি। কিন্তু এ বার বাংলা নববর্ষে মুখ ভার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের! সেই অর্থে প্রত্যাশামাফিক অর্ডারই তো আসেনি। অন্তত কালনার মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য তেমনই। এই বিশেষ দিনে মিষ্টিমুখের যে মাহাত্ম্য এক ধরনের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেখানেই এ বার টান পড়েছে!
কালনায় নববর্ষের জন্য বিশেষ ভাবে মিষ্টি তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় পাঁচ–ছ’দিন আগে থেকে। কিন্তু এ বারই সেই উন্মাদনায় ভাটা পড়েছে। বাজারের বেচাকেনার বিবর্ণ ছবিটাও কেমন যেন সামনে চলে এসেছে। তা হলে মিষ্টি সম্পর্কে বাঙালির মনে বৈরাগ্য তৈরি হয়েছে?
কালনার নিভুজি মোড় এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবরাজ বারুই বলছেন, ‘যে সমস্ত ব্যবসায়ী এ দিনে হালখাতা করে থাকেন, তাঁরা চান সারা বছরের ধারের টাকাটা ক্রেতারা এসে শোধ করে যান। কিন্তু নানা কারণে গত দু–তিন বছর ধরে সেই সাড়া কিন্তু পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই হালখাতার সংস্কৃতি নিম্নমুখী। এ বার তা অনেকটাই কমে গিয়েছে।’ যোগ করলেন, ‘যেটুকু অর্ডার মিলেছে, সেটা সোনা, মুদিখানা আরা কাপড়ের দোকান থেকে। মিষ্টান্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে সেটা খুব ভালো বিজ্ঞাপন কিন্তু নয়।’
তবে সেখানেই শেষ নয়। বাজারে ছানার দর এই মুহূর্তে ২২০ টাকা কেজি। ধরে নেওয়া যায়, তার দাম আরও কিছুটা বাড়বে, ফলে মিষ্টির দাম কিছুটা হলেও বাড়াতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া গতবারের থেকে এ বার চিনির দর কুইন্টাল প্রতি ৪০০ টাকা। তাই ইচ্ছা না–থাকলেও মিষ্টির ন্যূনতম দাম আগের জায়গায় ধরে রাখা যাচ্ছে না। তাতেও সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়েছেন।
কালনা শহরের আর এক মিষ্টি ব্যবসায়ী অভিজিৎ মোদকের কথায়, ‘গত বছরের তুলনায় এ বার হালখাতায় অর্ডার কম–ই এসেছে। দোকানেও মিষ্টির বিক্রির মাত্রা আগের চেয়ে কমেছে। সোমবার পর্যন্ত মাখা সন্দেশের কেজি ছিল ৩২০ টাকা। কচুরি, সিঙাড়ার দামও এক টাকা করে বাড়াতে হয়েছে। হালখাতায় সাধারণত লাড্ডুর চাহিদা ভালো থাকে। তার দাম বাড়াতে হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী তো আবার একই ধরনের দশটি মিষ্টি দিয়ে প্যাকেট তৈরি করার কথা জানিয়েছেন। সম্ভবত খরচ কমাতেই এমন ভাবনা।’ বাসনার সেরা বাসা রসনায় এ বার সত্যিই ভাটার টান!