এই সময়, কালনা: সুপ্রিম–সিদ্ধান্তে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এই মুহূর্তে চাকরিহারা। আর তার পরেই শুরু হয়েছে প্রবল সঙ্কট। শিক্ষকের অভাবে স্বাভাবিক পঠনপাঠন চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে স্কুলগুলির পক্ষে। কী ভাবে এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরানো যায়, তার উপায় খুঁজছে বিভিন্ন স্কুল।
কালনা মহকুমার অন্যতম বড় স্কুল কালনা মহারাজা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এই স্কুল থেকে চাকরি হারিয়েছেন ছ’জন শিক্ষক। গত সোমবার সেই ছয় চাকরিহারা শিক্ষক নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গেলেও তার পর থেকে কেউই স্কুলে আসেননি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রঘুনাথ মণ্ডলের মন্তব্য, ‘তাঁরা আর আসবেন কি না, বুঝতে পারছি না।’
এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত স্কুলে ছিল ইউনিট টেস্ট। তাই কোনওরকমে পঠনপাঠন চলে। বুধবার থেকে পুরোদমে শুরু হচ্ছে ক্লাস। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসও। শিক্ষকের অভাব মেটাতে তাই ক্লাসের সময় বাড়িয়ে একটা ক্লাস কমিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। টিফিনের আগের চারটি ক্লাসের সময়সীমা ছিল ৪০ মিনিট। তা বেড়ে এখন ক্লাস হবে ৪৫ মিনিটের। পাল্টে যাচ্ছে টিফিনের সময়ও। আগে দুপুর দেড়টায় টিফিন হতো।
এখন চারটি ক্লাস ধরে মোট ২০ মিনিট সময় বেড়ে যাওয়ায় টিফিনের সময় নির্ধারিত হয়েছে একটা ৫০ মিনিটে। তবে টিফিনের সময়সীমা একই থাকছে। আগে তা শেষ হতো দুটো ১০ মিনিটে। এখন তা আড়াইটেয় শেষ হবে। আগে থেকে প্রতিদিন ফাইভ ও সিক্সের ছ’টি করে ক্লাস ছিল। তা অপরিবর্তিত থাকছে। সেভেন থেকে আটটি ক্লাস ছিল। সেটি সাতটি করা হয়েছে।
বাড়ছে টিফিনের পরের ক্লাসগুলির সময়সীমাও। আগে টিফিনের পরে চারটি ক্লাস হতো ৩৫ মিনিট করে। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিনটি ক্লাসে। প্রত্যেকটি ক্লাস হবে ৪০ মিনিট করে। প্রধান শিক্ষক জানাচ্ছেন, শেষ ক্লাসটি মূলত সংশয় দূর করা, শর্ট প্রশ্নোত্তর, খেলার ক্লাস থাকে। তা আপাতত বন্ধ থাকবে। যে ছ’জনের চাকরি গিয়েছে, তার মধ্যে দু’জন ছিলেন জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক। ফলে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে জীবন বিজ্ঞানের বিকল্প শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে গিয়ে।
প্রধান শিক্ষক সাময়িক ভাবে সেই সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে উপায় বের করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক তাপস কার্ফাকে অনুরোধ করা হয়েছে সপ্তাহে চারটি ক্লাস নেওয়ার জন্য। তিনি সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন। তবে তার পরেও খুব কষ্ট করেই স্কুলের কাজ চালাতে হবে।
হঠাৎ কোনও শিক্ষক জরুরি কারণে ছুটি নিলে কী হবে? প্রধান শিক্ষকের ইঙ্গিত, সে ক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট ক্লাসটি বন্ধ রাখতে হবে। অসহায় প্রধান শিক্ষকের মন্তব্য, ‘আরও কয়েকদিন দেখি। ওই ছয় শিক্ষক কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাও দেখতে হবে। তার পরে ম্যানেজিং কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা করব। যদি সম্ভব হয়, স্কুল ফান্ড থেকে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে হবে।’