• প্রাণে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ, সাঁতরে রক্ষা
    এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    রবিবারের পরে সোমবারও প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে মালদার পারলালপুরে সাঁতরে এলেন ধুলিয়ানের একাধিক পরিবারের সদস্যরা। এদের মধ্যে নব দম্পতিও রয়েছেন। এমনকী, এক বধূ দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের জেরে নিজের পাঁচদিনের সদ্যোজাতকে কোলে নিয়েও পালিয়ে এসেছেন।

    রবিবার পর্যন্ত পালিয়ে আসা বাসিন্দাদের সংখ্যা ছিল ১৭০। কিন্তু সোমবার তা ৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে। এদের অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে বৈষ্ণবনগর থানার পারলালপুর হাইস্কুলে।

    ধুলিয়ান থেকে আসা বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘যেখানে গোলমাল চলছে সেখানে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল নেই। বাড়িঘর লুট হচ্ছে। মহিলাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

    ধুলিয়ান পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেদবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা এক দম্পতি রবিবার রাত একটা নাগাদ বাড়ি থেকে পালিয়ে গঙ্গা পেরিয়ে সাঁতরে মালদা চলে আসেন। তাঁদের অভিযোগ, ‘রাত ১২টা নাগাদ আমাদের পাড়ায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। আমার বাড়ি লুট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনওরকমে তিন নাবালক ছেলেকে নৌকায় তুলে দিই। একটি মাত্র নৌকায় অতিরিক্ত জায়গা ছিল না। সকলে জীবন রক্ষার জন্য পালাবার চেষ্টা করছিল। আমাদের মতো আরও অন্তত ৮ থেকে ১০ জন সাঁতরে মালদা চলে এসেছে।’

    ওই এলাকার আরও এক বধূ সদ্যোজাত পুত্র সন্তানকে নিয়ে একই রকমভাবে স্বামীর সঙ্গে নৌকায় চেপে মালদায় এসেছেন। তাঁর স্বামী পেশায় দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘পাঁচদিন আগে এলাকার একটি সরকারি হাসপাতালে পুত্র সন্তান হয়। দু’দিন হাসপাতালে থাকার পরে বাড়িতে আনি। এরপর হঠাৎ করে রবিবার রাতে আমাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। গবাদি পশুও লুট করেছে ওরা। চোখের সামনে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কোনওক্রমে পালিয়ে বেঁচেছি।’ আরও এক বাসিন্দা বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে রাস্তার পথবাতি নিভিয়ে হামলা শুরু হয়। ঘরের কোনও জিনিসপত্র নিয়ে আসার সময় পাইনি। ঘাটে এসে দেখি নৌকায় ঠাসাঠাসি করে মানুষ উঠে পালাচ্ছে। অনেকে অপেক্ষা করছে। এই পরিস্থিতিতে সকলকে হাতজোড় করে নাবালক দুই ছেলেমেয়েকে নৌকায় তুলে দিই। এরপর আমরা গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে পারলালপুর ঘাটে এসে উঠি।’

    সোমবার সকাল থেকে পারলালপুর স্কুলে‌ স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের দেখা করতে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ স্কুলের মেন গেট খুলে দেয়। পারলালপুরের বাসিন্দা শ্রীমন্ত মণ্ডল বলেন, ‘আমরা একত্রিত হয়ে চাঁদা তুলে অসহায় মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু পুলিশ ওই স্কুলে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিল, সে সময়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।’

    জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ধুলিয়ান পুরসভার বেদবুনিয়া এবং তিনপাকুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জাফরাবাদ, রানিপুর, মহাদেবনগর এই তিনটি গ্রাম থেকেই মূলত বাসিন্দারা পালিয়ে চলে আসছেন।

    মালদা সদরের মহকুমা শাসক পঙ্কজ তামাং জানিয়েছেন, যাঁরা ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার সহ নানা ধরনের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। রবিবারের থেকে সোমবার লোক আসার সংখ্যা খানিকটা বেড়েছে। স্কুলে পুলিশ ক্যাম্পও বসানো হয়েছে।’

    এদিকে, ধুলিয়ান থেকে মালদায় পালিয়ে আসা নির্যাতিত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, ‘অশান্ত এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু এসপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)