সংশোধিত ওয়াকফ বিল ঘিরে টানা কয়েক দিন ধরে চলা গোলমালের পরে শান্ত হতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদ। সোমবার থেকেই শান্তি ফিরতে শুরু করেছিল, মঙ্গলবার সেই ছবি আরও প্রকট হল। ব্লক স্তর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকি পাড়ায় পাড়ায় পুলিশের উদ্যোগে শান্তি বৈঠক হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন শতাধিক শান্তি বৈঠক হয়েছে। নববর্ষের সকালে তার প্রভাবও দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে ধুলিয়ান বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান খুলেছে। সংখ্যায় কম থাকলেও রয়েছেন ক্রেতারাও। এ ছাড়া দু’টি কাপড়ের দোকান এবং তিনটি ওষুধের দোকানও খোলা রয়েছে।
সামশেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে বিড়ি শ্রমিকদের মহল্লাতেও কাজ শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বন্ধ থাকা বিড়ি কারখানাগুলিও খুলতে শুরু করেছে। রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে এলাকাগুলি। পুলিশের উদ্যোগে শান্তিবৈঠকগুলিতে কোথাও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় থানার ওসিরা, আবার কোথাও থেকেছেন রাজ্য পুলিশের ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ (ওএসডি)-রা। নতুন করে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া আটকাতে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বুথ স্তরে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে শান্তি কমিটি। কোনও রকম অশান্তি বা গুজবের খবর মিললে তা পুলিশের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে কমিটির উপরে। কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে, স্থানীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তিকে। রবিবার থেকেই এই ধরনের শান্তি বৈঠক শুরু হয়েছিল। সোমবার তা আরও ব্যাপক পরিসরে হয়েছে।
এর মধ্যে নতুন করে কোনও অশান্তির প্ররোচনা এড়াতে পুলিশকর্মী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা যৌথ ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, উস্কানি ও প্ররোচনার ঘটনায় ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে রাজ্য পুলিশ। শান্তি কমিটি তৈরি করে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরানোর কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি নীলোৎপল পাণ্ডেও জানিয়েছেন, বিএসএফ ধৈর্যশীল রয়েছে। তবে কোনও ধরনের প্ররোচনা বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, উপদ্রুত এলাকাগুলিতে শান্তি ফেরানোই বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বস্তুত, গত কয়েক দিনের অশান্তিতে অনেকেই ভয়ে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সকলকেই যাতে ফের ঘরে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে বিএসএফ।