নীলাঞ্জন দাস
হাল ছাড়ছেন না! ধুলো ঝেড়ে এসএসসির পরীক্ষার বই বের করেছেন। নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি শুরু। সুপ্রিম রায়ের পরে চাকরি হারিয়ে মন খারাপ হলেও মনোবল ভাঙেনি রায়গঞ্জ দেবীনগর কৈলাশ চন্দ্র রাধারানি বিদ্যাপীঠের অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষিকা প্রিয়াঙ্কা গোহর। স্কুলের ম্যামকে না পেয়ে যদিও হতাশ স্কুলের পড়ুয়ারা। কন্যাশ্রী প্রকল্পে স্কুল পরপর দু’বার জেলায় প্রথম হয়েছে তাঁর দৌলতেই। সেই কাজ এখন কে করবেন? হতাশ প্রধান শিক্ষিকাও।
ক্যালকাটা গার্লস হাইস্কুল (ICSC) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে পরবর্তীতে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও বিএড করেছেন প্রিয়াঙ্কা। ১০ বছর আগে বিবাহ সূত্রে রায়গঞ্জে যান কলকাতার মেয়ে। স্বামী, সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসারে আকাশ ভেঙে পড়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর।
পড়ুয়াদের পড়ানোর পাশাপাশি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। ২০২০ সালের শেষের দিকে বিদ্যালয়ের ‘কন্যাশ্রী’ নোডাল শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পান। নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান ও কন্যাশ্রী প্রকল্পের যাবতীয় কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করে এসেছেন তিনি। ডেটা এন্ট্রি, পুরোনো কেস রিনিউ, কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি করে ছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিসিট করার পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনামূলক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। সহকর্মীদের কাছে ‘প্রিয়াঙ্কা মানেই ওবিডিয়েন্ট’ বলেই পরিচিত তিনি।
প্রিয়াঙ্কাকে না পেয়ে হতাশ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাখী দে সরকার। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দায়িত্বশীল মেয়ে। নিয়মিত ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি কন্যাশ্রীর সমস্ত দায়িত্ব পালন করত। ও থাকাকালীন পরপর দু’বছর আমরা কন্যাশ্রীতে জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছি। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সহকর্মীরা সকলের সঙ্গেই ওর সুসম্পর্ক। এখন পরীক্ষা চলছে বলে কন্যাশ্রীর কাজ বন্ধ রয়েছে। এরপর কাকে এই দায়িত্ব দেবো সেটাই ভাবছি।’
চাকরিহারা হওয়ার পরে যদিও স্কুলে গিয়েছিলেন কিছু কাজ বাকি থাকার জন্য। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘কন্যাশ্রীর পেন্ডিং কাজগুলি স্কুলে গিয়ে শেষ করে এসেছি। এখন হয়তো অন্য কেউ সেই দায়িত্ব পালন করবেন। পরে স্কুলে গিয়েছিলাম পরীক্ষার গার্ড দিতে। ছাত্রীরা এসে বলেছিল — ম্যাডাম আপনি আসবেন না বলে আমাদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আজ আপনি এসেছেন দেখে খুব ভাল লাগছে। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!'
তবে দেশের শীর্ষ আদালত নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়ায় ফের প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কার কথায়, ‘বর্তমানে আমি চিকিৎসার জন্য বাইরে এসেছি। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছি। এসএসসির বইগুলো নিয়ে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করেছি। জানি না কতটা পারব, তবে হাল ছাড়ব না।’