সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
সুপ্রিম–রায়ে পাঁচ শিক্ষকের চাকরি যাওয়ার পর স্কুলে আদৌ পঠনপাঠন চালানো যাবে কিনা সেই সংশয় তৈরি হয়েছে। এমনই হাল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনের তররুই শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনে। স্কুলটি ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হলেও মেলেনি প্রয়োজনীয় শিক্ষক। ২০১৬ সালের প্যানেলে ২০১৮-১৯ সালে পাঁচজন শিক্ষক যোগ দেওয়ায় ১১ জন শিক্ষক হয় স্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিকে রসায়ন থাকলেও ওই বিষয়ের কোনও শিক্ষক ছিলেন না।
প্রধান শিক্ষক অলোকরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘আমি অঙ্কের শিক্ষক। তবু কোনও রকমে রসায়ন পড়িয়ে দিতাম। ফলে ছাত্রছাত্রীদের খুব একটা অসুবিধে হত না। কিন্তু এ বার যা হল, তাতে স্কুলে পঠনপাঠন আদৌ চালানো যাবে কি না বুঝতে পারছি না।’
যাঁদের চাকরি গিয়েছে, সেই পাঁচজনের বিষয় ইংরেজি, সংস্কৃত, পিওর সায়েন্স, বায়ো সায়েন্স এবং নিউট্রিশন। সদ্য স্কুলে সেমেস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সেই খাতা দেখবে কে, জানেন না কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, ‘খাতার বান্ডিল স্কুলেই পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক না থাকলে কাকে দিয়ে খাতা দেখাব?’ তা হলে কি ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার মূল্যায়নও হবে না? স্কুলের ৮২৭ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়াবে কে? সবার কাছেই উত্তর অজানা। চাকরিহারা শিক্ষকেরা রবিবারই জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ স্কুলে যাবেন না।
এই স্কুলেরই চাকরি যাওয়া ইংরেজির একমাত্র শিক্ষক বিশ্বেশ্বর দাস বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে। সরকার কী ভাবছে তাও স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে স্কুলে গেলে যদি আদালত অবমাননা হয়। তাই স্কুলে যেতে পারছি না।’ ফলে স্কুলের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরাও দুশ্চিন্তায়। অভিভাবকদের প্রশ্ন, ‘জানি না, এ বার স্কুলে পড়াবেন কারা। শিক্ষকই যদি না থাকেন, ক্লাস হবে কী করে?’
এই পরিস্থিতিতে চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিকে কি ভর্তি নেবেন? প্রধান শিক্ষকের জবাব, ‘মাধ্যমিকটাই চালাব কী করে ভাবতে পারছি না। উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে কী ভাবব বলুন তো? এমন পরিস্থিতি থাকলে হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকে এ বার ভর্তি নিতে পারব না।’