নববর্ষের সকালে এক শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির ওই শিক্ষকের নাম প্রণবপ্রতীপ নাইয়া (৪২)। তেঁতুলবেড়িয়ার গোচরণ টিএস সনাতন হাইস্কুলে বাংলা পড়াতেন তিনি। পরিবার সূত্রে খবর, ২০১৩ সালের এসএসসি প্যানেলের শিক্ষক প্রণবপ্রতীপ। মঙ্গলবার কুলতলির বাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। মিলেছে সুইসাইড নোটও। পরিবারের দাবি, ২০১৬ সালের এসএসসির চাকরির প্যানেল বাতিল হওয়ার পর থেকেই কেমন একটা থম মেরে থাকছিলেন। বাড়িতে উদ্বেগের কথা জানিয়েওছিলেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার এই দেহ উদ্ধারের ঘটনা। অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত শুরু করেছে বারুইপুর জেলা পুলিশ।
বাংলার শিক্ষক তিনি। এত বছর ধরে স্কুলে পড়াচ্ছেন। কিন্তু সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেল বাতিল হওয়া এবং প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে দাবি পরিবারের।
প্রণবপ্রতীপের বাবা সুভাষচন্দ্র নাইয়া বলেন, ‘ও দিনরাত মোবাইল ফোন দেখত আর চাকরির সব খবরগুলো দেখে কেমন একটা ভয়ে ভয়ে থাকত। খালি ভাবত, ওদের চাকরিও যদি চলে যায়। আমি বোঝাতাম, আগে এ রকম কিছু হোক, তখন না হয় দেখা যাবে। আর চাকরি না থাকলে কী আসে যায়। একটা ছেলে আমার। এটা কী করে ফেলল ও!’
সুভাষচন্দ্র নাইয়া চাষবাস করেন। ছেলে সরকারি পাওয়ার পর একটু একটু করে বাড়ির কাজে হাত দেন। কিন্তু এরই মধ্যে এই ঘটনা। তবে শুধু মাত্র চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কারণেই এই ঘটনা নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ দিকে এই ঘটনাকে ঘিরে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে বলে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি।
বারুইপুর জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছে, প্রণবপ্রতীম ২০১২ সালে পরীক্ষা দিয়ে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল কাজে যোগ দেন। প্রথমে মুর্শিদাবাদের বেগমবাড়ি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এর পর উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে ২০২২ সালে ট্রান্সফার হয়ে জয়নগরে টিএস সনাতন স্কুলে যোগ দেন।
বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ তোলেন, এই মৃত্যু নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি বলেন, ‘একটা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে এই ঘটনায়। বলা হচ্ছে, চাকরিহারার প্রথম বলি। ৩০-৪০টা অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গেই এই কেসটাও দেখছি। একটাই অনুরোধ সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করার আগে ভালো করে যাচাই করে নিন। কোনও সন্দেহ থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কিন্তু গুজব ছড়ালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। লিগাল অ্যাকশন নেবো। ’