• জমিদারি নেই, ঐতিহ্য বহন করে চলছে মশলা মেলা, গিয়েছেন কখনও?
    এই সময় | ১৫ এপ্রিল ২০২৫
  • বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর বিভিন্ন পার্বণে বাংলার নানা প্রান্তে বসে মেলা। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙার  মশলা মেলা তেমনই এক উত্সব। ঐতিহ্য মেনে গোবরডাঙার জমিদারবাড়ির সুপ্রাচীন মেলা আজও হয়ে চলেছে। এ বছরও বৈশাখের প্রথম দিন জমিদারবাড়ির মশলা মেলায় ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়।

    গোবরডাঙার জমিদারবাড়ির এই মশলা মেলার আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। ২০৩ বছরের পুরোনো এই মেলা। গোবরডাঙার জমিদার খেলারাম মুখোপাধ্যায়ের পুত্র কালিপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এই মেলার সূচনা করেন। কৃষকেরা বছরভর খাজনা দিতে পারতেন না। চাপ তৈরি করে খাজনা আদায়ের পক্ষপাতী ছিলেন না জমিদার খেলারাম। তাই তিনি খাজনা আদায়ের অভিনব উপায় হিসাবে এই মেলা শুরু করেন তিনি। কৃষকদের উত্পাদিত মশলা-সহ ফসল জমিদার বাড়ির উঠোনে নিয়ে আসতে হতো। সেখানেই বিক্রি করার নিদান দিয়েছিলেন জমিদার। বিক্রিবাটা থেকে যে লাভ হতো, সেটা দিয়ে জমিদারবাড়ির কর মিটিয়ে ঘরে ফিরতেন কৃষকেরা। কর আদায়ের মাধ্যম হিসাবে শুরু হলেও, ধীরে ধীরে এই রীতি মেলার আকার ধারণ করেছে। প্রথমে এই মেলার নাম ছিল ‘গোষ্ঠ বিহার মশলা মেলা’। পরে অবশ্য মশলা মেলা হিসাবেই মুখে মুখে ছড়িয়েছে।

    নববর্ষের প্রথম দিন গোবরডাঙার জমিদারবাড়িতে বসত এই মেলা। কালের নিয়মে জমিদারি গিয়েছে। খাজনা আদায় প্রথাও বিলুপ্ত। কিন্তু মশলা মেলা রয়ে গিয়েছে। ভোর ৩টে থেকে শুরু হয় এই মেলা। চলে বিকাল পর্যন্ত। বছরের প্রথম দিন পাইকারি বেচাকেনা হলেও পরবর্তীতে আরও ১০ দিন ধরে চলে খুচরো মশলার হাট। পয়লা বৈশাখের দিন দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এই মেলায় আসেন মশলা বিক্রি করতে। এক মশলা বিক্রেতা বলেন, ‘অনেক বছর ধরে মেলায় মশলার দোকান দিই। এই মেলা থেকে ব্যবসা শুরু করলে সারা বছর বিক্রিবাটা ভালো হবে। এই বিশ্বাস নিয়েই এখানে আসি।’ ক্রেতা শেফালি মণ্ডল বলেন, ‘সস্তায় পাওয়া যায় বলে সারা বছরের মশলা কিনে নিয়ে যাই এখান থেকে। শুকনো লঙ্কা, হলুদ, গরম মশলা, জিরে কিনেছি। বছরে এক বার হয় বলে বেশি করে সব কিনে নিই।’

  • Link to this news (এই সময়)