অভিনব উপায়ে ‘নববর্ষ’ পালিত হল আলিপুরদুয়ারে, সামিল হলেন সকলেই...
আজকাল | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক : নিজেদের রীতি মেনে নতুন বছরকে স্বাগত জানাল মেচ ও বোডো জনজাতির মানুষেরা। চিরাচরিত প্রথা মেনে প্রকৃতি ও অগ্নিদেবকে পুজো করে নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন মহিলারা।
সাধারণত বাঙালিরাই চিরাচরিতভাবে বাংলার নতুন বছরকে উদযাপন করে থাকেন। কোথাও বা পূজার্চনা, আবার কোথাও নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা সালের প্রথম দিনকে উৎসবের মধ্যে পালন করতে দেখা যায় বাঙ্গালিদের। কিন্তু বাংলা সালের এই নতুন বছর উৎসব কি শুধু বাঙালিরাই পালন করেন ?
না, একথা একেবারেই ঠিক নয়। বাঙ্গালিদের পাশাপাশি মেচ ও বোডো জনজাতির নাগরিকরাও এই উৎসব উদযাপন করে থাকেন। আমরা যাকে বলে থাকি নববর্ষ। বৈশাখ মাসের প্রথম দিন তারাও এক ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করে থাকেন।
কি করেন তারা ? আমরা যারা বাঙালি, তারা নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পুজো করে থাকি ইষ্ট দেবতাকে। কেউ পুজো করেন লক্ষ্মী ও গণেশ, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দিরে পরিবারের মঙ্গল কামনায় পুজো করে থাকেন। একই রকমভাবে মেচ ও বোডো জনজাতিরাও পূজার মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানান।
তারা কোনও দেব-দেবী নয়, পুজো করেন প্রকৃতিকে। অর্থাৎ জল, বায়ু এবং অগ্নি, এই তিন সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মদেবকে পুজো করা হয়। বছরে প্রথম দিন সেই অভিনব উৎসব পালিত হল আলিপুরদুয়ার জেলার সাতালি মণ্ডল পাড়া এলাকায়।
বোডো ভাষায় এই নববর্ষ উদযাপন উৎসবকে 'গদান বথর' বলা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে সাতালি মন্ডলপাড়া এলাকায় মেচ ও বোডো জনজাতির মহিলারা 'গদান বথর' পালন করে আসছেন। এবছর নিয়ে তাদের ৩৩ তম গদান বথর উৎসব পালিত হচ্ছে।
এদিন জনজাতির মহিলারা নিজেদের সাংস্কৃতিক পোশাক ডোখনা পড়ে হোম-যজ্ঞ করে ব্রহ্মদেবকে পুজো করেন। তাঁদের বিশ্বাস, প্রকৃতি একমাত্র শক্তি যা কিনা সমগ্র পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রকৃতি যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি মনুষ্য জনজাতিকেও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই তারা প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মদেবকে পুজো করেন।
পুজোর মাধ্যমে ব্রহ্মদেবের কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন। ব্রহ্মদেব যেন সদা সকলের প্রতি সহায় থাকেন এবং সমগ্র প্রকৃতিকে রক্ষা করেন। শুধু পুজো দিয়েই শেষ নয়। পুজোর পর আগামী সাতদিনব্যাপী এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাগুরুম্বা নৃত্যও করবেন মহিলারা। বাগুরুম্বা নৃত্যের মাধ্যমে প্রত্যেক বাড়িতে ব্রহ্মদেবের আশীর্বাদ পৌঁছে দেবেন।