বাংলা দিবসে নববর্ষ বরণ ও বিশিষ্টদের আকাদেমি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান
দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
১লা বৈশাখে বাংলা দিবস উপলক্ষে নববর্ষ বরণ এবং রাজ্যের শিল্পী ও সাহিত্যিকদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করল রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। মঙ্গলবার বিকেল ঠিক চারটে নাগাদ রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। মঞ্চে বিশিষ্ট অতিথিদের আসন গ্রহণের পর রাজ্য সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান সচিব শান্তনু বসুর স্বাগত ভাষণ এবং মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের ভাষণের মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এবার স্বনামধন্য নজরুলগীতি শিল্পী রামানুজ দাশগুপ্তকে ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করে ‘পশ্চিমবঙ্গ কাজী নজরুল ইসলাম আকাদেমি’। শিশু ও কিশোর সাহিত্যের জন্য দুই বিশিষ্ট সাহিত্যিককে সম্মানিত করে ‘শিশু কিশোর আকাদেমি’। এজন্য ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয় সাহিত্যিক অশোক কুমার মিত্র এবং সাহিত্যিক শিবশঙ্কর ভট্টাচার্যকে ‘উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে সাতজন বিশিষ্টকে তাঁদের নিজের নিজের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মানিত করে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’। আকাদেমির তরফে ‘রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয় সুবোধ সরকার, সুজন সেনগুপ্ত এবং রণবীর সমাদ্দারকে। এঁদের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের জন্য কবি সুবোধ সরকার, অন্য ভাষার সাহিত্যের জন্য রণবীর সমাদ্দার এবং বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য সুজন সেনগুপ্তকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। পাশাপাশি গদ্য সাহিত্যের জন্য আনন্দগোপাল ঘোষকে ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার’, কথাসাহিত্যের জন্য সন্মাত্রানন্দকে ‘বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার’, কাব্য সাহিত্যের জন্য রাহুল পুরকায়স্থকে ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মৃতি পুরস্কার’ এবং সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়কে কথা সাহিত্যের জন্য ‘বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হয় প্রদান করে ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’র তরফে।
‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি’ও সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য চারজন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীকে এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত করেছে। এই চারজনের মধ্যে যন্ত্রসংগীতে পণ্ডিত তরুণ ভট্টাচার্যকে ‘আলাউদ্দিন পুরস্কার’, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে বিদুষী ডালিয়া রাহুতকে ‘গিরিজা শঙ্কর পুরস্কার’, কণ্ঠ ও যন্ত্র সংগীতে সৃজনশীল প্রতিভার জন্য পন্ডিত কুমার বোসকে ‘জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ পুরস্কার’ এবং সরস্বতী দেবীকে ‘পান্নালাল ভট্টাচার্য পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে ভক্তিগীতির জন্য। এছাড়া নৃত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘পশ্চিমবঙ্গ নৃত্য আকাদেমি’র পক্ষ থেকে পলি গুহকে ‘উদয় শঙ্কর পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
‘রাজ্য চারুকলা পর্ষদ’ও এবার তিনজনকে বাংলা দিবসে সম্মানিত করেছে। এই তিনজনের মধ্যে স্বপ্নেশ চৌধুরীকে ‘অবনীন্দ্র পুরস্কার’, ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্যকে ‘বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় পুরস্কার’ এবং দিলীপ কুমার সাহাকে ‘রামকিঙ্কর বেইজ পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে’।
পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা আকাদেমি এবার একজন যাত্রা শিল্পীকে সম্মানিত করেছে। এই আকাদেমির তরফে বিশিষ্ট যাত্রা শিল্পী শর্মিলা পালকে ‘বীণা দাশগুপ্ত স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া লোক সংস্কৃতি এবং আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র চারজন শিল্পীকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে। এঁদের মধ্যে শিল্পী শচীন্দ্রনাথ সরকারকে ‘লালন পুরস্কার’, গৌরচন্দ্র মুর্মুকে ‘পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু পুরস্কার’, আকুলবালা সরকারকে ‘ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা পুরস্কার’, অনুজা অধিকারী মণ্ডলকে ‘সুধী প্রধান পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
পুরস্কার প্রদানের পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সবশেষে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশিক সেন ও মধুমিতা বসু।