• প্রাইমারি ছেড়ে মাধ্যমিকে আসাই কি কাল হলো?
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সুমন ঘোষ, খড়্গপুর

    প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করতে করতেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষার জন্য দিনরাত এক করে পড়াশোনা করেছিলেন। মিলেছিল সাফল্যও। ১২ বছরেরও বেশি সময় প্রাথমিকে চাকরি করার পরে ২০১৯–এ নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি শিক্ষক হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের তররুই শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বেশ্বর দাস।

    গত ৩ এপ্রিলের সুপ্রিম–রায়ে তাঁরও চাকরি গিয়েছে। এখন আফশোস করছেন দাঁতনের ঝিনুক পলাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বেশ্বর। তিনি এখন নিজেকেই প্রশ্ন করেন, প্রাথমিকের চাকরি ছেড়ে মাধ্যমিকে আসার সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল?

    মাধ্যমিক স্কুলে তাঁর পড়াতে আসার কারণটাও ছিল একটু আলাদা। বিশ্বেশ্বর জানান, দিদি, জামাইবাবু মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। ২০১২ সালে তাঁর বোনও এসএসসি–র পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পান মাধ্যমিক স্কুলে। সব মিলিয়ে মাধ্যমিকে আসার জেদ বেড়ে যায় তাঁর। প্রাথমিকে পড়ানোর সঙ্গেই শুরু হয় নিজের পড়াশোনাও। ২০১৬ সালের প্যানেলে জায়গা পান তিনি। ২০১৯–এ নবম-দশম শ্রেণির ইংরেজি শিক্ষক হয়ে যোগ দেন তররুই শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাভবনে।

    তিনিই ওই স্কুলের একমাত্র ইংরেজির শিক্ষক হওয়ায় নবম-দশমে যোগ দিলেও উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজির ক্লাসও নিতে হতো। সুপ্রিম–রায়ে মুষড়ে পড়েছেন বিশ্বেশ্বর। তাঁর কথায়, ‘মাধ্যমিক স্কুলে দেওয়ার পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে একটি গ্রেড পে যুক্ত হয়। তাতে দেখেছিলাম, আমি বর্তমানে মাধ্যমিকে যা মাইনে পাই, সেই হিসেবে আমার সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়া বন্ধুরা আমার থেকে অন্তত ১০-১১ হাজার টাকা বেশি মাইনে পায়। তাতেও আমার দুঃখ হয়নি। কারণ, আমি চেয়েছিলাম মাধ্যমিক স্কুলে পড়াতে। কিন্তু এটাই কি কাল হলো! এখন কী করব?’

    বিশ্বেশ্বর ১৯৯৪ সালে ৮৩ শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ। দাঁতন কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্সে ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন। তখন আর এমএ পড়ার কথা ভাবেননি। ২০০৬ সালে কৃষ্ণমাইতিবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। চাকরি করতে করতেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় এমএ করেন। ইগনু থেকে বিএড।

    তিনি জানান, ডব্লিউবিসিএস–এর প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। ২০১৪-১৫ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশও করেন। ২০১৬ সালে সেন্ট্রাল টেটও পাশ করেন। এরই মধ্যে ২০১৬ সালের এসএসসি–তে চাকরি পেয়ে যান। তাঁর কথায়, ‘এত কিছু করে চাকরিটা পেলাম। এখন বিভ্রান্ত লাগছে।’

  • Link to this news (এই সময়)