জালনোট, ব্রাউন সুগারের কারবারের কমিশনের টাকাতেই চলে স্লিপার সেল
বর্তমান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
সন্দীপন দত্ত, মালদহ: জালনোট, ব্রাউন সুগারের কারবারের কমিশনের টাকাতেই চলে স্লিপার সেলের খরচ। ছদ্মবেশ ধরতে স্লিপার সেলের সদস্যরা নাম ভাড়িয়ে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে। তাদেরকে নিয়মিত একটা রাহাখরচ দিতে হয়। সেই টাকা আসে কোথা থেকে? গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই টাকার জোগান আসে জালনোট, ব্রাউন সুগারের কমিশন থেকে। জালনোটের কমিশন কত? গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত ১০০ টাকার ভারতীয় জালনোটের জন্য ৩০ টাকা কমিশন থাকে। জালনোটের চাহিদা বাড়লে সেই কমিশন বেড়ে ৫০ টাকাও হয়। চাহিদার উপরে জালনোটের কমিশনের দর বাড়ে কমে। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশকে এই স্লিপার সেল হিসেবে কাজে লাগানো হয়। এই স্লিপার সেলই এখন গোয়েন্দা এবং পুলিস কর্তাদের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। যদিও মালদহের পুলিস সুপারপ্রদীপ কুমার যাদব বলেন, পুলিস সতর্ক আছে। নিয়মিত নজরদারি চলছে।
শেষ এক বছরে মালদহের সীমান্তবর্তী কালিয়াচক থেকে কোটি কোটি টাকার জালনোট উদ্ধার করেছে পুলিস এবং এসটিএফ। একই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের ব্রাউন সুগার। সবটাই উদ্ধার হয়েছে মালদহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে। মালদহের বৈষ্ণবনগরে কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোনাকসা বাজার ও শিবগঞ্জ। যা জালনোট কারবারের হাব বলে পরিচিত।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিএসএফের অলক্ষ্যে কাঁটাতারের উপর দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে বাংলাদেশ থেকে এপারে পাঠানো হচ্ছে ভারতীয় জালনোট। প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলে এপারের পাচারকারীদের সঙ্গে লোকেশন ঠিক করা হয়। পরে সুযোগ বুঝে আলো জ্বালিয়ে সিগন্যাল দিয়ে এপারে জালনোট পাচার করে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা।
পুলিস এবং গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছ, জালনোটের কারবার রুখতে এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) এখানে নজরদারি শুরু করে। এজন্য ফারাক্কাতে একটি অফিসও খোলা হয়েছে। মাঝে কিছুদিন এনআইএ ও পুলিসের ধরপাকড় এবং নোট বন্দির জেরে জালনোট কারবার বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় তেমন অশান্তির ঘটনাও মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ঘটেনি। বাংলাদেশে অশান্তির পর জালনোট ও ব্রাউন সুগারের কারবার ফের নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। যার ফল স্বরূপ পরপর মোথাবাড়ি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জে হামলা অশান্তির সঙ্গে ব্যাপক লুটতরাজ।
স্লিপার সেলের জন্য কেন টার্গেট করা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশকে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এদের প্রত্যেকেই অভাবগ্রস্ত। স্বল্প সময়ে অধিক টাকা রোজগারের টোপ দিয়ে তাদের কাজে লাগান হচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্য পুলিসের এসটিএফ শিয়ালদহ থেকে প্রচুর অস্ত্রসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তে জানা যায় ধৃত ওই অস্ত্র কারবারি পেশায় একজন পরিযায়ী শ্রমিক। সে মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা।