• ‘দিনহাটার মানুষের উপর ভরসা নেই’, মন্ত্রী উদয়নের মন্তব্যে জলঘোলা কোচবিহারজুড়ে
    বর্তমান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সংবাদদাতা, দিনহাটা: দিনহাটার মানুষের উপর ভরসা নেই। জানি না দ্বিতীয়বার মন্ত্রী হতে পারব কি না— মঙ্গলবার সাহেবগঞ্জ রোডে সুইমিং পুল নির্মাণ কাজের সূচনা অনুষ্ঠানে এসে এমন মন্তব্য করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। তাঁর এমন মন্তব্যে কোচবিহার জেলাজুড়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে। জেলার রাজনৈতিক মহলেও চলছে চর্চা। 

    দিনহাটা শহরের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও ভোটের সময় শহরের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফলে। চব্বিশের লোকসভা ভোটেও শহরে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে গ্রামীণ ভোটেই লিড পেয়েছিল তারা। সেই ক্ষোভই যেন এবার প্রকাশ্যে আনলেন মন্ত্রী। 

    উদয়নবাবু বলেন,দিনহাটার মানুষের উপর ভরসা নেই। দ্বিতীয়বার মন্ত্রী হতে পারব কি না, জানি না। আমার স্বপ্ন ছিল শহরের জন্য একটি আধুনিকমানের সুইমিং পুল করা। তার কাজের সূচনা নববর্ষের দিন হয়ে গেল। বরাতপ্রাপ্ত এজেন্সিকে বলেছি ছ’মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে, যাতে ভোটের আগেই উদ্বোধন করতে পারি। আমি মন্ত্রী না থাকলে অন্য কেউ এসে এই সুইমিং পুল উদ্বোধন করবেন। সেটা হলে খারাপ লাগবে। তবে গ্রামের মানুষ রয়েছে ভোট দেওয়ার জন্য। 

    উল্লেখ্য, প্রায় ৪ কোটি ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হতে চলেছে সুইমিং পুলটি। সঙ্গে থাকছে অফিস ঘর, পার্কিং জোন সহ একাধিক পরিকাঠামো। একটি ক্লাবের নিজস্ব জমিতেই হচ্ছে এই নির্মাণ। 

    এদিকে, মন্ত্রীর মন্তব্যকে হাতিয়ার করে পাল্টা আক্রমণে নেমেছে বিজেপি। পদ্ম পার্টির কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মনের কটাক্ষ, মন্ত্রী হয়েও নিজের বিধানসভায় উন্নয়নের কাজ করতে পারেননি উদয়নবাবু। এখন বুঝতে পারছেন, আগামী নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত। সেই হতাশা থেকেই এমন মন্তব্য করছেন তিনি। 

    ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল। সেই সময় দিনহাটা শহরে বড় ধাক্কা খেয়েছিল জোড়াফুল শিবির। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সব ওয়ার্ডেই বিপুল ভোটে এগিয়েছিলেন পদ্ম প্রার্থী। ’১৯- এর হার থেকে শিক্ষা নেয় তৃণমূল। সাংগঠনিক রদবদল ঘটানো হয়। গ্রামীণ এলাকায় অনেকটা ক্ষত মেরামত হলেও শহরে একই হাল ছিল। একুশের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী ছিলেন উদয়নবাবু। মাত্র ৫৭ ভোটে তিনি বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। দিনহাটা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় তিনি সফল হতে পারেননি। যদিও পরে উপ নির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জয়ী হন। ভোটে জিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী হন। নিজের দপ্তরের মাধ্যমে দিনহাটা শহরে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজকর্ম শুরু করেন। এত উন্নয়নের পরেও দিনহাটা শহরে জোড়াফুল চব্বিশের লোকসভা ভোটে ধরাশায়ী হয়। কোচবিহার আসনে তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হলেও দিনহাটা শহরে লিড পেয়েছিল বিজেপি। সামনেই ’২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। একুশের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তারজন্য সচেষ্ট তৃণমূল। মন্ত্রীর বক্তব্য, একুশের ফল যদি ছাব্বিশেও হয় তাহলে শহরের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)