নাচে-গানে-আড্ডায় বর্ষবরণ নববর্ষে বাঙালি খাবারে মজে আমজনতা
বর্তমান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: আকাশ মেঘলা। দুপুরে একপশলা বৃষ্টি হলেও মঙ্গলবার বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে ছন্দপতন হয়নি শিলিগুড়িতে। তবে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার আবহাওয়া ছিল অনুকূল। সর্বত্র বাঙালি পোশাক পরে পদযাত্রা, ফুটবলের বারপুজো থেকে নাচ, গান ও আড্ডায় দিনটি উদযাপন করা হয়। সঙ্গতে বাঙালি খাবার। ডাল, কাঁঠাল চিংড়ি থেকে মালাই চিংড়ি, পাবদা পাতুড়ি, ইলিশভাপা, মটনকষা থেকে আমের চাটনি, দই ও মিষ্টি ছিল মেনুতে।
এদিন সকালে শিলিগুড়ির আকাশ ছিল মেঘমুক্ত। সকাল সকালই বাণিজ্যনগরীর অধিকাংশ দোকানে হয় গণেশ পুজো। আনন্দময়ী কালীবাড়ি, মায়ের ইচ্ছা কালীবাড়ি, সেভক কালীমন্দির সহ বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় করেন ভক্তরা। শিলিগুড়ি পুরসভার উদ্যোগে বাঘাযতীন পার্ক থেকে সূর্য সেন পার্ক পর্যন্ত শোভাযাত্র করা হয়। মেয়র গৌতম দেব, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার সহ পুরসভার কাউন্সিলাররা শোভাযাত্রায় হাঁটেন। হাজারকণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ দিবস উপলক্ষ্যে শহরে পদযাত্রা বের করে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর। তাতে ধামসা, মাদল, ঢাক নিয়ে শামিল হন শিল্পীরা। দীবন্ধুমঞ্চে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দুপুরে আচমকা কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়। মেঘলা আকাশ ও ঠান্ডা হাওয়া উপেক্ষা করেই সন্ধ্যায় বাঘাযতীন পার্কে বসে কবিতা, নাচ ও গানের আসর। বাড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তরাঁয় মেনুতেও ছিল বাঙালি নানা পদ। ভাত, সুকতো, ডাল, পাটপাতার বড়া, বেগুনি, সব্জি, কাঠাল চিংড়ি, চিংড়ি মালাইকারি, বোরলি মাছের ঝাল, সর্ষে দিয়ে পাবদা মাছের পাতুড়ি, মটনকষা, আমের চাটনি, রসগোল্লা, চমচম, কালাকাঁদ, মিষ্টি ও টকদই, আইস ক্রিম প্রভৃতি মেনুতে ছিল। এদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কোচবিহার রবীন্দ্র ভবনে বাংলা দিবস পালন করে জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুমিতা রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সৌমেন দত্ত, এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর মদনমোহনের মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় করেন জেলাবাসী।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রভাতফেরী ও মনীষীদের মূর্তিতে মাল্যদান করে আলিপুরদুয়ার পুরসভা। শহরের ১০ কিমি রাস্তা বেলুন দিয়ে সাজায়। রাস্তায় আলপনা দেন পুর চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ কর ও ভাইস চেয়ারপার্সন মাম্পি অধিকারী। এদিন থেকেই শহরের রাস্তায় পুরসভার লাগানো মাইকে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি বাজানো শুরু হয়েছে। ফালাকাটা শহরও আলপনা ও তোরণে সাজিয়ে তোলা হয়। সন্ধ্যায় শহরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
বর্ষবরণে মাতে জলপাইগুড়িও। তৃণমূল কংগ্রেস মিলন সঙ্ঘের মাঠ থেকে শোভাযাত্রা বের করে। তাতে ধুতি-পাঞ্জাবি থেকে সাঁওতালি, রাজবংশী পোশাকে অংশ নেন পুরুষ-মহিলারা। ডুয়ার্সের নানা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প নিয়ে প্রচার চালানো হয়। শোভাযাত্রায় মন্ত্রী বুলুচিক বরাইক সহ অন্যান্যরা ছিলেন। রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রা শেষ হয়। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা হয়।
নববর্ষে হোটেল, রেস্তরাঁগুলিতে ছিল বাঙালি খাবারের হরেক পদ। ডুয়ার্সের টুরিস্ট স্পটে রেস্তরাঁগুলির মেনুতে ছিল মুড়িঘণ্ট, ডাবচিংড়ি, আড়-পার্সে মাছের ঝাল, বোরলি। তবে বাংলা নববর্ষে পাতে পদ্মার ইলিশ না পড়ায় মন খারাপ জলপাইগুড়িবাসীর।