সতর্কতা ব্যবস্থা, ঝাড়গ্রামে থাকবে ১০ কোম্পানি বাহিনী
বর্তমান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রাম একসময় মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। অশান্ত জঙ্গলমহলে শুরু হয় খুনোখুনির রাজনীতি। প্রাণ গিয়েছিল সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিসেরও। কেন্দ্রের রিপোর্টে ঝাড়গ্রাম এখন মাওবাদীমুক্ত। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঝাড়গ্রামে এখনও ১০কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে।
ঝাড়গ্রামের এসপি অরিজিৎ সিনহা এদিন বলেন, বিষয়টি কেন্দ্রের। ‘লিগ্যাসি অ্যান্ড থ্রাস্ট’ অনুযায়ী ১০কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। আমাদের তরফেও নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। দেশের ১০টি রাজ্যে মাওবাদীদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গের সাফল্যের ছবি সবচেয়ে উজ্জ্বল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তথ্যে, ২০১০ সালে রাজ্যের ১২৬টি জেলা মাওবাদী অধ্যুষিত হিসেবে চিহ্নিত ছিল। কেন্দ্রের রিপোর্টে সেই সংখ্যা এখন ১৮-য় নেমে এসেছে। ছত্তিসগড় রাজ্যে এখনও মাওবাদী প্রভাব সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড। পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র জেলা হিসেবে ঝাড়গ্রামের নাম এতদিন ধরে উল্লেখিত ছিল। রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমার গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদার স্ট্র্যাকো ক্যাম্পে শহিদ স্মরণে এসে বলেছিলেন, আমরা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় রাজ্য, যারা মাওবাদীদের মুক্ত করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে মাওবাদীদের মুক্ত করতে ১০-১২ বছর সময় লেগেছিল। সেখানে আমরা সাত-আট বছর সময় নিয়েছি।
কেন্দ্রের রিপোর্টে ঝাড়গ্রামকে মাওবাদী অধ্যুষিত হিসেবে চিহ্নিত করায় জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, এক দশক ধরে জেলায় কোনও রাজনৈতিক হিংসা ও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। উন্নয়ন এলাকার মানুষের জীবনে শান্তি এনে দিয়েছে। তারপরেও কেন্দ্রের রিপোর্টে ঝাড়গ্রামকে মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমরা সরবও হয়েছিলাম। সম্প্রতি রাজ্যকে পাঠানো মাওবাদী সংক্রান্ত পর্যালোচনা রিপোর্টে ঝাড়গ্রাম জেলাকে মাওবাদী মুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৪ সালে মাওবাদীদের কার্যকলাপ চালানো জেলাগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করেছে। দেশের ১৮টি জেলাকে সক্রিয় মাওবাদী প্রভাবিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হল ‘লিগ্যাসি অ্যান্ড থ্রাস্ট’। অর্থাৎ, মাওবাদীদের প্রভাব যেখানে আর নেই। কিন্তু নতুন করে সংগঠন গড়ে তুলতে পারে বা সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের মধ্যে এমন ২৮টি জেলার মধ্যে এ রাজ্যের ঝাড়গ্রাম রয়েছে। সেই হিসেবে ঝাড়গ্রামে এখনও ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, বাম আমলের অনুন্নয়নের সুযোগ নিয়ে মাওবাদীরা জেলায় ঢুকেছিল। যার পরিণতিতে জেলার বহু নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ভুলে গেলে চলবে না, মাওবাদীদের হাতে ৮৮জন পুলিস কর্মী মারা যান। জামবনীর বুড়িশোল জঙ্গলে যৌথবাহিনীর হাতে ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর মাও শীর্ষ নেতা কিষেনজির মৃত্যু হয়েছিল। কেন্দ্রের রিপোর্টে আদার এলডব্লু অ্যাফেক্টেড জোনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাতে বাম চরমপন্থী সংগঠনগুলি সম্বন্ধে সতর্ক করা হয়েছে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। যাতে জেলার কোনও জায়গায় এরা মাথা তুলতে না পারে। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, এক দশক ধরে জেলার মানুষ একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। পরিকাঠামোর উন্নয়নের হাত ধরে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। এই জেলায় সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম মাথাচাড়া দিতে পারবে না।