• অতীত খুঁড়ে ৪টি প্রকল্পের জবাবদিহি চাইল কেন্দ্র, ১০০ দিনের টাকা বন্ধে নয়া ফিকির
    বর্তমান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখতে নয়া ফিকির কেন্দ্রের! টাকা বন্ধ করার তিন বছর পরে কার্যত ‘কবর’ থেকে তুলে আনা হয়েছে চারটি প্রকল্প। এক কোটি টাকার বেশি অর্থমূল্যের এই চারটি প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ১ এপ্রিল চিঠি পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। এই প্রকল্পগুলিতে আর্থিক অনিয়ম বা নয়ছয় হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মোদি সরকারের তরফে। এই চিঠি জন্ম দিয়েছে নয়া বিতর্কের। সেই সঙ্গে জোরদার করেছে রাজনৈতিক কারণে বাংলার ন্যায্য প্রাপ্য আটকে রাখার তত্ত্বও। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, রাজ্যের সাত হাজার কোটি টাকা বকেয়া এবং নতুন করে ‘লেবার বাজেট’ ধার্য করা আটকে রাখতে বিগত তিন বছরে কেন্দ্রের অজুহাতের তালিকা বিস্তর। এই চিঠিও তার থেকে আলাদা কিছু নয়। তাই মাত্র চারটি প্রকল্পকে সামনে রেখে কেন্দ্র ‘বাংলার ভাত মারার’ নতুন ছক সাজিয়েছে বলে দাবি রাজ্যের শাসক দলের।

    ২০২২ সালের মার্চ মাসে মনরেগা আইনের ২৭ নম্বর ধারা আরোপ করে বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকা পাঠানো বন্ধ করেছে কেন্দ্র। তারপর থেকেই চিঠি-পাল্টা চিঠির লড়াইয়ের সাক্ষী থেকেছে রাজ্যবাসী। কেন্দ্রের সমস্ত শর্ত মেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের পাঠানো পর্যবেক্ষক দলের তোলা প্রশ্নের জবাবে ২৩টি অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট (এটিআর) পাঠিয়েছে রাজ্য। তাও কেন্দ্র কোনও টাকা ছাড়েনি। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মদুমদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত এড়িয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তৎকালীন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং এবং বর্তমান মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। এই পরিস্থিতিতে ২০১৯-২০ এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষের চারটি প্রকল্প নিয়ে তদন্তের নির্দেশ নিছক ‘রুটিন ম্যাটার’ বা কাকতালীয় বলে মানতে নারাজ পঞ্চায়েতমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘চিঠিতে কেন্দ্র জানিয়েছে, তারা এক কোটি টাকার বেশি অর্থমূল্যের কাজের যৌক্তিকতা খোঁজা শুরু করেছে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে। তার এক বছর পর হঠাৎ এখন বাংলার এই চারটি প্রকল্পের কথা মনে পড়ল কেন্দ্রের! এত দিন কি তারা নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল? এর থেকে ফের প্রমাণিত হল যে কেন্দ্র শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই বাংলার টাকা আটকে রাখছে। যাই হোক, আমরা রিপোর্ট পাঠাচ্ছি যাতে পরবর্তীকালে আর কোনও প্রশ্ন তুলতে না পারে ওরা।’    

    রাজ্যের ১০০ দিনের কাজের দায়িত্বে থাকা কমিশনারের কাছে এসে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি অভিষেক কুমারের লেখা চিঠিটি। সেখানে বলা হয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের অধীনে কী কী কাজ করা হবে, তা চিহ্নিত করে রাজ্য। বিগত পাঁচটি আর্থিক বছরে রাজ্যের তরফে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় এক কোটি টাকার বেশি অর্থমূল্যের কাজের ‘টেকনিক্যাল এবং প্রশাসনিক’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া জেলার যে চারটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল, আদৌ তার প্রয়োজন ছিল কি না, এক্ষেত্রে কোনও আর্থিক অনিয়ম বা নয়ছয় হয়েছে কি না, তা দ্রুত তদন্ত করে খতিয়ে দেখতে হবে। এর জন্য রাজ্যকেই ‘টেকনিক্যাল এবং প্রশাসনিক’ অফিসারদের নিয়ে একটি দল গঠন করতে হবে। তদন্তে যা উঠে আসবে, তার প্রেক্ষিতে রাজ্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করল, তার বিস্তারিত তথ্য ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’  হিসেবে আগামী ৩০দিনের মধ্যে কেন্দ্রকে পাঠাতে হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)