• ছুটিতেও অন ডিউটি! অটোর ৭০ লক্ষের বিল নিয়ে হইচই
    বর্তমান | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: সরকারি অফিস আট ঘণ্টার। অথচ, অফিসের প্রয়োজনে অটো রিকশগুলি রোজ ১৪-১৫ ঘণ্টা ছুটে চলেছে! কাজের দিন তো বটেই, ছুটির দিনে অফিস বন্ধ, অথচ খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে, ওই অটো কাজের জন্যই ছুটেছে রাস্তায়। দক্ষিণ দমদম পুরসভায় অটো রিকশর এমন সব ‘ভুতুড়ে’ বিল দেখে চক্ষু চড়কগাছ আধিকারিকদের। সূত্রের খবর, এক বছরে পুরসভা অটো ভাড়া বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। শুধু তাই নয়, পুরসভার গাড়ির মেরামত ও তেলের খরচ বছরে সাড়ে ছয় কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, এই বিপুল খরচের বড় অংশ স্রেফ খাতায় কলমে দেখানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে অর্থ নয়ছয়ের। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, খরচ কমাতে সমস্ত রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

    সূত্রের খবর, দক্ষিণ দমদম পুরসভার মোট ২০টি অটো ভাড়ায় নিয়ে রেখেছে।  ঘণ্টা পিছু ১০০ টাকা ভাড়া। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মীরা ওই অটোয় চেপে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় কাজে যান। যদিও শহরবাসী জানেন, পুরসভার কাজ কার্যত দুপুর থেকে শুরু হয়। তার আগে সিংহভাগ আধিকারিক পুরসভায় হাজির হন না। অথচ, সারা দিনে অটো চলছে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা।  এই খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ থেকেই বাৎসরিক প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। চলতি বছরের বাজেটে এ বাবদ ৭০ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। শুধু কী অটো! পুরসভার গাড়ি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ। সূত্রের খবর, আইন অনুযায়ী পাওয়ার কথা নয়, এমন পুরকর্মীরাও গাড়ি নিয়ে ঘুরছেন। আধিকারিক এবং সিআইসিদের গাড়ির তেলের বিলেও কোনও লাগাম নেই বলে অভিযোগ। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পুরসভার ডিজেল খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা, পেট্রল বাবদ প্রায় ৮৭ লক্ষ, মোবিল খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। ২০২৪ -২৫ অর্থবর্ষে ডিজেলে প্রায় ১কোটি ৮০ লক্ষ, পেট্রলে প্রায় ৯০ লক্ষ ও মোবিলের খরচ প্রায় ৫৫ 

    লক্ষ টাকা। চলতি অর্থবর্ষে (২৫-২৬) এই তিন খাতে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে  খরচ হয়েছিল 

    প্রায় ৩ কোটি, পরের বছর 

    প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ ও চলতি অর্থবর্ষে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২কোটি ৯০ লক্ষ টাকা।

    সম্প্রতি সিআইসি বৈঠকে পুরসভার অর্থ আধিকারিক ববিতা চট্টোপাধ্যায় চৌধুরি অটোর বিল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, প্রত্যেক মাসেই অটোর বিল বেড়ে চলেছে। কিছু অটো দিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা চলছে বলে দেখানো হচ্ছে। এমনকী ছুটির দিনেও অটো চলছে। এই জিনিস চলতে পারে না। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সারা দিনে ন’ঘণ্টার বেশি অটো চলবে না। ছুটির 

    দিনে চললে, তার আগাম অনুমতি নিতে হবে। সূত্রের খবর, পুরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থ আধিকারিক ওই বিল ছেড়ে দিতে বাধ্যও হয়েছেন। পুরসভার 

    ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্ত বলেন, পুরসভার মোট ৩০৩ টি গাড়ি রয়েছে। ১৪-১৫ বছরের পুরাতন গাড়ির সমস্ত ধরনের খরচ বেশি। ওইসব গাড়ি বিক্রি করে নতুন গাড়ি নেওয়া, প্রতিদিন ন’ঘণ্টা অটো চলাচলের মতো একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের থেকে খরচ কমানোর চেষ্টা করছি।
  • Link to this news (বর্তমান)