নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও চুঁচুড়া: কথায় বলে, রক্ষকই ভক্ষক! বাস্তবেও ঘটল তেমনই ঘটনা। নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত পুলিসকর্মীই অপহরণের ঘটনায় অভিযুক্ত! চায়ের দোকানদারকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে চন্দননগদর আদালতে ‘পোস্টিং’ এএসআই অশোক দাসের বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীরামপুর থানা। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত তারক ভৌমিককে। ঘটনায় জড়িত অশোকের দুই সঙ্গীর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিস। প্রাথমিক তদন্তের পর তারা জেনেছে, দেনার দায় থেকে উদ্ধার পেতেই ধৃত পুলিসকর্মী এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈদ্যবাটির পদ্মাবতী কলোনিতে একটি চায়ের দোকান রয়েছে ষাটোর্ধ্ব তারকবাবুর। প্রতিদিন ভোরে তিনি দোকান খোলেন। পুলিসের কাছে অভিযোগে তাঁর পুত্রবধূ মৌসুমিদেবী জানিয়েছেন, অন্যান্য দিনের মতো সোমবার ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ শ্বশুরমশাই দোকান খোলেন। ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁর শ্বশুরমশাইকে টেনে-হিঁচড়ে একটি সাদা গাড়িতে তোলা হয়েছে। গাড়ির নম্বরও তিনি জানান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চায়ের দোকানে গিয়ে দেখেন, সেখানে শ্বশুর নেই। তাঁর মোবাইলটি পড়ে রয়েছে। সকাল ৬টা নাগাদ মৌসুমিদেবীর মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, তারকবাবু তাদের কব্জায় আছেন। ফোনে তাঁর গলাও শোনানো হয়। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন করে বলা হয়, ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিলে তবেই তাঁকে ছাড়া হবে। এরপর আরও কয়েকবার ফোন পান অভিযোগকারিণী। তিনি শ্রীরামপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন, মুক্তিপণের জন্য তাঁর শ্বশুরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে। পুলিস মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
যে ক’টি নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তদন্তকারীরা প্রথমে সেগুলির সাবস্ক্রাইবার আইডি ও কল ডিটেইলস বার করেন। জানা যায়, অশোক দাস নামে একজনের নম্বর থেকে ফোন এসেছে। বিভিন্ন লোকেশন থেকে ফোন করা হচ্ছে। বারবার ডেরা পাল্টাচ্ছে অপরাধীরা। একসময় ওই ফোনের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় শেওড়াফুলি স্টেশন এলাকায়। দেরি না করে বাহিনী নিয়ে ছুটে যান তদন্তকারী অফিসার প্রণয় ঘোষ। সেখানে গিয়ে আটক করেন অশোক দাসকে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। তখন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে জানা যায়, ধৃত ব্যক্তি আদতে পুলিসের এএসআই। চন্দদনগর আদালতে ‘পোস্টিং’ রয়েছেন তিনি। পুলিসের কাছে ধৃত দাবি করেন, বাজারে তাঁর অনেক দেনা রয়েছে। পাওনাদারদের চাপ বাড়ছিল। তাই তিনি কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেন। কয়েকদিন আগে তিনি ছুটি নিয়ে বৈদ্যবাটি এলাকায় আসেন। স্থানীয় সূত্রে পুলিস জেনেছে, অপহৃত চায়ের দোকানদারের ছেলে মাদক কারবারে জড়িত বলে জানতেন ধৃত পুলিসকর্মী। তাঁর ছেলের গ্রেপ্তারির খবর অশোকের কাছে ছিল। তাই তাঁর ধারণা ছিল, মাদক ব্যবসার মোটা টাকা বাড়িতেই রাখা থাকবে। তারকবাবুকে অপহরণ করলে সেই টাকা হাতে এসে যাবে। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ! কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পুলিসের হাতেই পাকড়াও হতে হয় তাঁকে। এমন আজব ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিস মহলও রীতিমতো হতবাক।