নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন মহা সমারোহে উদযাপন করল বাঙালি। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক শোভাযাত্রা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মিষ্টি বিতরণ। আনন্দে, খুশিতে পালিত হল পয়লা বৈশাখ। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাস্তায় পাজামা-পাঞ্জাবি, লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে হাজির সকলে। বৈশাখের রোদ উৎসব উদযাপনের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেল। অশান্ত সময়ে নতুন বছর উদযাপনের মধ্যে ছিল মানবতার ধ্বজা তুলে রাখার অঙ্গীকার। শপথ। সর্বত্রই বাজল মিলনের সুর।
দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে সকালে বেরিয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলার কৃষ্টি তুলে ধরা হয়েছিল সেখাানে। রাস্তায় নাচ-গান। সকলের হাতে কাগজের তৈরি পেঁচা, বাঘ, ফুল। মাথায় টুপি। বিশাল আকারের দাঁড়কাক, ঘোড়া, বায়োস্কোপ দেখতে রাস্তার দু’ধারে ভিড়। বিকেলে কলেজ স্ট্রিটে ‘মিলনের সুরে বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠান। সেখান থেকে বিকেলে বের হয় শোভাযাত্রা। বাংলার ঢাকবাদ্যি সহযোগে সেই যাত্রা রাস্তা ধরে যত এগিয়েছে তত বেড়েছে ভিড়। কলেজ স্ট্রিট এদিন ছিল আদি মেজাজে। দোকানে দোকানে আমপাতা, শোলার কদম ফুল, গাঁদার মালা সাজানো। দোকানদাররা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে ক্রেতাদের অপেক্ষায়। হালখাতা করতে মানুষ ভিড় করেছিল রোদ উপেক্ষা করে দুপুরের পর পরই। তারপর হাতে ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। বইয়ের দোকানগুলির বাইরে তরুণ-তরুণীদের ঠাসা ভিড়। জামা-কাপড়, গয়নার দোকানও উঠেছিল সেজে। কলেজ স্কোয়ারে বসে চায়ে চুমুক। একদল তরুণ সাদা শাড়ির উপর ‘শুভ নববর্ষ’ লিখে রাস্তায় টাঙাচ্ছিলেন। তা দেখতে ছোট ভিড়।
শহরের ব্যবসায়ীরা ঝুড়িতে লাল খাতা, ফুল, প্রসাদ, লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি নিয়ে হাঁটছেন। খাবারের দোকানগুলি অফার দিচ্ছে। একটি দোকানে মাইকে ঘোষণা করে জানাচ্ছে, ‘চিকেন বিরিয়ানি নিলে কোল্ড ড্রিংক ফ্রি।’ এক ব্যবসায়ী বললেন, এ বছর দুপুরের পর থেকেই মানুষ এসেছে। দ্য বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সংগঠনের উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি বিশ্বজিত্ দাশগুপ্তর উদ্যোগে শ্যামবাজারের জে বি রায় স্টেট আয়ুর্বেদিক হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রোগীদের ফুল-ফল, মিষ্টি দেওয়া হয়।
বিকেলের পর কোনও সরু গলিতে হাঁটতে গিয়ে হঠাত্ দেখা সেই কোন কালের বন্ধুর সঙ্গে। ‘শুভ নববর্ষ’ বলে জড়িয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়। তারপর চা। আড্ডা শেষই হয় না। দূর থেকে কানে ভেসে আসছে মাইকের শব্দ। গান চলছে, ‘এসো হে বৈশাখ’। অনেকেরই মনে আছে, গতবছর এ সময় উত্তেজনা ছিল। ছিল লোকসভা নির্বাচন। নববর্ষের দিন প্রার্থীদের ভোট ভিক্ষায় চারদিক ছিল মুখরিত। এ বছর সে উত্তেজনা নেই। ফলে চুটিয়ে হালখাতা উৎসব পালন করেছে মানুষ। সন্ধ্যা হতেই পাড়ায় পাড়ায় এক হাতে ঠান্ডা পানীয়, অন্য হাতে মিষ্টির প্লেট। খাওয়া-দাওয়া সঙ্গে দেদার আড্ডা। মিলিয়ে মিশিয়ে নববর্ষের পয়লা দিনে বাঙালি যে আসলে একলা নয়, তা সারাক্ষণই বোঝা গেল। নববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বাঙালি বাজিয়ে চলল বাংলার চিরকালীন মিলনের সুরও।