এই সময়: বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটাই ভয়াবহ গরম দিয়ে শুরু হয়েছে, এমন নজির নেহাত কম নেই। ১০ বছর আগে ১৪২৩ বঙ্গাব্দে (২০১৬ সাল) পয়লা বৈশাখেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সে দিক থেকে বড় রকমের ব্যতিক্রমী হয়ে রইল ১৪৩২ বঙ্গাব্দের (২০২৫ সাল) পয়লা বৈশাখ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.২ সেলসিয়াসে আটকে থেকে ১৪৩২–এর পয়লা বৈশাখ গত দশ বছরের শীতলতম নববর্ষের নজির গড়ল।
গত ১২ মার্চ অর্থাৎ ফাল্গুনের একেবারে শেষ পর্যায়ে মরশুমে প্রথম বারের জন্য ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মালুম করেছিল বাংলা। সে দিন পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০.১ ডিগ্রিতে। এর কয়েক দিন পর ২৮ মার্চ বাংলার অন্তত আট জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর পার করে ফেলেছিল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে পানাগড় ছিল সে দিন রাজ্যের উষ্ণতম স্থান।
বাংলা ক্যালেন্ডার মতে সেটা ১৪ চৈত্র ১৪৩১। ফাল্গুন এবং চৈত্রেই যদি এমন অবস্থা হয়, তা হলে বৈশাখে কী হবে — এমন জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিলের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ অক্ষরেখা এবং বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের মতো পর পর বেশ কয়েকটা ওয়েদার সিস্টেম তৈরি হওয়ায় গরম মাত্রাছাড়া জায়গায় পৌঁছতে পারেনি বাংলায়।
আলিপুর হাওয়া অফিসের রিপোর্ট অনুযায়ী এ বছর এপ্রিলের প্রথম ১৫ দিনের মধ্যে ১০ দিনই কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঘোরাফেরা করেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা একদিন ৩২ ডিগ্রি এবং একদিন ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেও ছিল। বাকি তিন দিনের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা দু’দিন ৩৬ ডিগ্রিতে এবং একদিন ৩৫ ডিগ্রির ঘরে উঠেছিল।
আবহবিদদের মতে, কয়েক দিন ছাড়া ছাড়া নিম্নচাপ অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার ফলেই এ বছর গরম তেমন ভাবে বাড়েনি এখনও। বাংলা নতুন বছরের মুখে ফের একসঙ্গে একাধিক ওয়েদার সিস্টেম তৈরি হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জায়গার তাপমাত্রাই ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে আটকে থাকল।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশের উপরে ভূপৃষ্ঠের এক কিলোমিটারেরও কম উচ্চতায় একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ থেকে ঝাড়খণ্ড এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে ওই ঘূর্ণাবর্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা।
এদেরই মিলিত প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলায় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকেছে। এর প্রভাবেই বাংলার প্রায় প্রতিটা জেলাতেই ঘণ্টায় ৩০–৪০ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া বয়েছে কয়েক দিন। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিও হয়েছে। তাতেই ‘ম্যাজিক’ হয়েছে বাংলা নববর্ষে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.২ ডিগ্রিতে আটকে থাকায় দশকের শীতলতম পয়লা বৈশাখ দেখল কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা।