বাঁক খাওয়া হুগলি নদীর উপর লেখা ‘রিভার’ শব্দটা পড়তে একটুও অসুবিধা হয় না। কিন্তু হোঁচট খেতে হয় নদীর পূর্ব দিকে কিছুটা এগোনোর পরেই। মানচিত্রে এই জায়গাটা চিহ্নিত ‘পাটোরিয়া স্ট্রিট’ হিসেবে। ওই মানচিত্র তৈরি হয়েছিল ১৭৮০–র দশকের কোনও এক সময়ে। তখন হয়তো সাহেবরা ওই জায়গাটিকে এমন নামেই ডাকতেন।
আজকের কলকাতায় তার পরিচয় পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট। ইস্ট–ইন্ডিয়া কোম্পানির সার্ভেয়ার উইলিয়াম বেইলির তৈরি বহু পুরোনো ওই মানচিত্র এ বার দেখা যাবে পাথুরিয়াঘাটা ৫–এর পল্লির দুর্গাপুজোয়। মঙ্গলবার, বাংলা নববর্ষে ৮৬ বছরের পুরোনো এই পুজোর ব্যানার উন্মোচন হলো।
আড়াইশো বছরের পুরোনো কলকাতার স্থানীয় ইতিহাসের পাশাপাশি এ বার কলকাতা দেখতে পাবে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস–এক্স–এর ড্রাগন ক্যাপস্যুলও। বাস্তবে সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলকিনস এবং অন্য দুই মহাকাশচারীকে নিয়ে ওই স্পেস ক্যাপস্যুল মেক্সিকো উপসাগরের জলে আছড়ে পড়েছিল। তবে কলকাতায় তেমন হবে না। সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের মণ্ডপে দেখা যাবে ওই মহাকাশযানের মডেল।
দুর্গাপুজো আসতে এখনও প্রায় ছ’মাস দেরি। কিন্তু পাড়ার পুজোর মণ্ডপ কী ভাবে সাজানো হবে, সেটা ঠিক করে নিয়ে বাংলা নববর্ষেই বাঙালির সেরা উৎসবের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল শহরে। প্রতি বছর শহরের যে মণ্ডপগুলিতে দর্শকের ভিড় উপচে পড়ে, তাদের মধ্যে অন্যতম ৮৬ বছরের পাথুরিয়াঘাটা ৫–র পল্লি এবং ৯০ বছরের সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। এর মধ্যে পয়লা বৈশাখের সকালে পাথুরিয়াঘাটা ৫–র পল্লি তাদের ব্যানার উন্মোচন করে।
পুজোর সভাপতি তথা স্থানীয় ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলোরা সাহা বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা পাথুরিয়াঘাটা এবং সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় ইতিহাসকে পুজোর থিম হিসেবে তুলে ধরা।’ ইলোরা ‘এই সময়’–কে বলেন, ‘কলকাতার এই অঞ্চলের ইতিহাস খুব পুরোনো। তাই থিম হিসেবে স্থানীয় ইতিহাস খুবই আকর্ষক হতে চলেছে। পুজোর ব্যানার উন্মোচনের জন্যও বেছে নেওয়া হয়েছিল রাজেন্দ্র মল্লিকের বাড়িকে।’
পাথুরিয়াঘাটা একটা সময়ে নানা ধরনের স্থানীয় শিল্পের পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। বিলুপ্তপ্রায় ওই শিল্পগুলিকেও থিমে জায়গা করে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এই পুজোর থিমমেকার হিসেবে থাকছেন দুই শিল্পী সৌমিক ও পিয়ালির জুটি। সৌমিক চক্রবর্তী বলেন, ‘ব্যানারে একটি মানচিত্র দেখানো হয়েছে। সেটি উইলিয়াম বেইলি নামে এক কার্টোগ্রাফারের তৈরি এবং কলকাতার প্রাচীনতম মানচিত্রগুলির অন্যতম। ‘সেদিনের’ কলকাতা এবং ‘আজকের’ কলকাতা — থিমে দুটো যুগই থাকবে।’
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের অন্যতম উদ্যোক্তা সজল ঘোষ বলেন, ‘সাম্প্রতিক কালে সুনীতা উইলিয়ামসের আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা সকলের নজর কেড়েছিল। যে ভাবে সারা পৃথিবী রুদ্ধশ্বাসে এই ঘটনা দেখেছে, তার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই আগামী দুর্গাপুজোয় সুনীতাদের প্রত্যাবর্তনই আমাদের পুজোর থিম হবে।’