বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল
সুপ্রিম–রায়ে রাজ্যজুড়ে চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীর। স্কুল চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা। আতান্তরে পড়েছে ছাত্রছাত্রীরাও। এমন সময়ে উল্টো ছবি চিত্তরঞ্জন রেল শহরে রাজ্য সরকার পরিচালিত একটি মাধ্যমিক স্কুলে। যেখানে শিক্ষিকা রয়েছেন সাত জন, শিক্ষাকর্মী একজন, কিন্তু ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র দুই।
চিত্তরঞ্জন হাই স্কুল ফর গার্লস নামে এই স্কুলটি চালু হয়েছিল কয়েক দশক আগে। ডিভি গার্লস রেল স্কুলের ভবনেই চলে এই স্কুল। এক দশক আগেও এখানে অনেক ছাত্রী ছিল। গত কয়েক বছরে ছাত্রী সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ৩০–এর মধ্যে। শিক্ষিকা ছিলেন প্রায় ১৫–২০ জন। এখন স্কুলে রয়েছে মাত্র দু’জন ছাত্রী। প্রধান শিক্ষিকা কিছুদিন আগেই অবসর নিয়েছেন। সাত জন শিক্ষিকা এবং একজন করণিক মিলে এখন স্কুল চালাচ্ছেন।
কেন এই অবস্থা?
স্কুলের টিচার ইন–চার্জ শ্রাবণী মণ্ডল বলেন, ‘বহু বছর ধরে স্কুলে বিজ্ঞানের কোনও শিক্ষিকা বা শিক্ষক নেই। দুই ছাত্রীই তারা দশম শ্রেণির। ঝাড়খণ্ডে বাড়ি হওয়ায় মাঝেমধ্যে স্কুলে আসে তারা। স্কুলে আমি ছাড়া ইতিহাস, ভূগোল ও বাংলায় একজন করে এবং ইংরেজিতে দু’জন শিক্ষিকা রয়েছেন।
এক জন ফিজ়িকাল ইনস্ট্রাক্টর রয়েছেন। রেলের যে স্কুল ভবনে এখন আমাদের স্কুল চলছে সেখানে আমাদের দু’টি ঘর রয়েছে। একটি ঘরে ক্লাস হয় আর অন্য ঘরে আমরা শিক্ষিকারা বসি। ছাত্রীরা না থাকলে কি আমাদের ভালো লাগে? তবু ওই দু’জনের জন্যই রোজ স্কুলে আসি। হাজিরা খাতায় সই করি।’
অন্য সমস্যাও অবশ্য রয়েছে। তৃণমূল শিক্ষা সেলের স্থানীয় নেতা অর্ধেন্দু রায়ের বক্তব্য, ‘আগে রেলকর্মী ছাড়া অনেক বহিরাগত বাড়ি বানিয়ে চিত্তরঞ্জনে থাকতেন। তাঁদের মেয়েরা বা পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মেয়েরা এই স্কুলে ভর্তি হতো। রেল শহরে বেআইনি নির্মাণ উচ্ছেদের পর এঁরা সকলেই বাইরে চলে গিয়েছেন। তাই স্কুলও বদলে নিয়েছে ছাত্রীরা।’
স্কুল শিক্ষা দপ্তর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? টিচার ইন–চার্জের উত্তর, ‘বছর দেড়েক আগে পশ্চিম বর্ধমান জেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিদর্শক আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলেন। আমরা সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তার পরে সেখান থেকে আর কোনও নির্দেশ আসেনি।’ অর্ধেন্দু বলছেন, ‘এই স্কুলে ছাত্রী না থাকার বিষয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার ডেপুটেশন দিয়েছি। তার পরে ডিআই বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য এসআই চিত্তরঞ্জনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একাধিকবার পরিদর্শন হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পাল বলেন, ‘বুধবার অফিস খুললেই আমি ডিআইকে ডেকে পাঠিয়ে পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’
উল্লেখ্য, এই স্কুলের শিক্ষিকাদের অন্য স্কুলে বদলি করা এবং এখানকার ছাত্রীদের পার্শ্ববর্তী স্কুলে পাঠানোর দাবির কথা জানিয়ে প্রায় তিন বছর আগে ‘এই সময়’ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। তদানীন্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) তদানীন্তন ডিআই–কে বিষয়টি কার্যকরী করতে বললেও, পরে ওই দুই আধিকারিক বদলি হয়ে যাওয়ায় কিছুই হয়নি।