• শাহজাহানের কোটি টাকার গাড়ি নিলামে তুলছে ইডি
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)–এর অফিসারেরা। সেই মামলা বহুদূর গড়ায়। শাহজাহানের বিরুদ্ধে হিসাব–বর্হিভূত আয়ের মামলায় ২০২৪–এর মার্চে ইডি তাঁর তিনটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছিল। এতদিনে সেই গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে। ইডি অফিসারের দাবি, এই প্রথম রাজ্যে তাদের কোনও মামলায় বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি নিলামের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন মামলায় গাড়ি বাজেয়াপ্ত হলেও, কোনও দিন নিলাম হয়নি।

    শুধু শাহজাহান নয়, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা রোজ় ভ্যালির মামলায়, সেই সংস্থার মালিক গৌতম কুণ্ডুর প্রায় ৫০টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেই গাড়িগুলি প্রায় আট–নয় বছর ধরে ইডি–র কাছে পড়ে পড়ে কার্যত নষ্ট হতে বসেছে। ইডির একটি সূত্র জানাচ্ছে, শাহজাহানের গাড়ির নিলাম শেষ হলে গৌতমের গাড়িগুলিও নিলামে তোলা হবে।

    ইডি সূত্রে খবর, পিএমএলএ (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত জিনিস নিলামে তুলে বর্তমান বাজারদরে বিক্রি করে সেই টাকা ফিক্সড ডিপোজ়িট করে রাখা যায়। মামলার শেষে অভিযুক্ত যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তা হলে ওই টাকা কেন্দ্র সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়। আর অভিযুক্ত নির্দোষ প্রমাণিত হলে এবং তিনি আদালতে ওই টাকা ফেরত চাইলে আদালতের অনুমতিতে তাঁকে তা ফেরত দেওয়াই দস্তুর। শাহজাহান এবং গৌতমের ক্ষেত্রেও মামলা চলছে। আপাতত গাড়িগুলি নিলামে বিক্রি করে সেই টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা পড়ার কথা।

    ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা শাহজাহানের তিনটি গাড়ি নিলামের জন্য মার্চে বিশেষ ইডি আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মাহিন্দ্র থার, যার তৎকালীন বাজারদর ছিল প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার স্করপিও এবং একটি হুড খোলা জিপও ছিল। প্রায় এক বছর পড়ে থেকে থেকে সেই গাড়িগুলির বাজারদর অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে মনে করা হচেছে।

    গৌতম কুণ্ডুর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা গাড়িগুলির মধ্যে রোলস রয়েস, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ়, টয়োটা–র মতো দামি বিদেশি গাড়িও ছিল। নিজে অর্ডার দিয়ে ছয় দরজার একটি লিমুজ়িনও বানিয়েছিলেন গৌতম। সেটাও ছিল বাজেয়াপ্তর তালিকায়। ইডি–র দাবি, যে সময়ে গাড়িগুলি বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তখন বিক্রি করলে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যেত। এত বছর ধরে বসে থেকে থেকে সেগুলি অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এক অফিসারের কথায়, ‘এখন কার্যত কিলোদরে বিক্রি করে দিতে হবে গাড়ি।’

    কেন বাজেয়াপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়নি? কেনই বা এতদিন সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি?

    ইডি–র একটি সূত্র জানাচ্ছে, বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি–বাড়ি বা অন্য সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তদন্তকারীদের কাজের মধ্যে পড়ে না। সেটা ইডি–রই অন্য বিভাগ দেখে। অভিযোগ, মূলত তাদেরই অনীহায় এটা হয়। একই ভাবে নিলামে তুলতে বছরের পর বছর চলে যায়। এক ইডি অফিসারের কথায়, ‘শাহজাহানের গাড়ি যদি বাজেয়াপ্ত করার এক বছরের মধ্যে নিলাম করা যায়, তা হলে রোজ় ভ্যালির ক্ষেত্রে এত দেরি কেন হবে?’

    জানা গিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি ইডি সরাসরি বিক্রি করে না। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কিছু এজেন্সি বা সংস্থা রয়েছে। আদালতের অনুমতি পেয়ে তাদের বাজেয়াপ্ত গাড়ির তালিকা দেয় ইডি। নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, বর্তমান বাজারদর ঠিক করা — সব ব্যবস্থাই এজেন্সি করে। এই প্রক্রিয়ায় যে কোনও ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারে।

  • Link to this news (এই সময়)