• আবাসন নির্মাণের জন্য গঙ্গার ভিতরে গার্ডওয়াল!
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • সৌমিত্র ঘোষ, বালি

    নদীর ধারে খোলামেলা পরিবেশে কে না থাকতে চায়? শান্ত, নিরিবিলি জীবন উপভোগ করার জন্য অনেকেই এখন গঙ্গার পাড়ে ফ্ল্যাট বুকিং করছেন। তারই সুবাদে হাওড়া, বালি, শিবপুর, কোন্নগর, উত্তরপা়ডা, শ্রীরামপুর প্রভৃতি এলাকায় গঙ্গার ধারে মাথা তুলছে একের পর এক আবাসন। বালির কেদার ঘাটের পাশে গঙ্গার ধারে সম্প্রতি এরকমই একটি আবাসন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

    অভিযোগ, ওই আবাসন নির্মাণের জন্য নদীর পাড় থেকে প্রায় ১০ ফুট ভিতরে ঢুকে গার্ডওয়াল দেওয়া হয়েছে। যদিও আইন অনুযায়ী সেটা করা যায় না। এ নিয়ে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। পুরসভাতেও অভিযোগও জমা পড়েছে। তার পরেও অভিযুক্ত প্রোমোটারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

    বালির কেদার মুখার্জি লেনের পাশেই রয়েছে কেদার ঘাট। তার ঠিক পাশেই একটা বিশাল বাগান রয়েছে। বাগানটি বহু বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। বাগানটি উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। গঙ্গার ধার বরাবর বাগানের পাশ দিয়ে একটা পুরোনো গার্ডওয়াল ছিল। গঙ্গার ভাঙনে তার কিছুটা অংশ আগেই ভেঙে পড়েছিল। এক সময় বাগানটি গাছ-গাছালিতে ভরা ছিল।

    সম্প্রতি সেই বাগান কিনে নেন এক প্রোমোটার। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই জমিতে আবাসন তৈরি হবে। তার জন্যই বাগানের পুরোনো পাঁচিল ভেঙে গঙ্গার ভিতের ঢুকে চওড়া গার্ডওয়াল বানানো হয়েছে।

    স্থানীয় বাসিন্দা সরস্বতী রায় বলেন, ‘শুনেছি, জমির মালিকই নাকি প্রোমোটারকে বলেছেন, গঙ্গার ভিতর পর্যন্ত ওদের জায়গা রয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকে আমরা এখানে বসবাস করছি। এ রকমটা আগে কখনও শুনিনি। চোখেও দেখিনি।’ আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘প্রোমোটাররা অনেক প্রভাবশালী। ওদের অনেক ক্ষমতা। আমাদের কথা কে শুনবে? ওখানে কী হচ্ছে, সেটা যাতে লোকজন দেখতে না পায়, তার জন্য টিন দিয়ে ঘিরে দিয়েছে।

    গঙ্গা দখল হয়ে যাচ্ছে দেখেও প্রশাসন কিছু করছে না।’ সঙ্গীতা মণ্ডল বলেন, ‘আমরা আগে বাগানের শৌচাগার ব্যবহার করতাম। সেখানেও তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এ ভাবে গঙ্গা বুজিয়ে দেওয়াটা অন্যায়। কিন্তু আমরা কী আর করতে পারি বলুন!’

    গঙ্গা দখলের খবর সামনে আসার পর পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। ডিঙি নৌকায় চেপে পুরো এলাকাটি ঘুরে দেখেছিলেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। এক জন নদী বিশেষজ্ঞকেও তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরিদর্শনের পরে বিজ্ঞান মঞ্চের প্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। স্থানীয় প্রশাসনকেও তাঁরা বিষয়টি অবগত করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

    ওই পরিদর্শক দলের অন্যতম সদস্য পরিবেশ বিজ্ঞানী তপন মিশ্র বলেন, ‘সমুদ্র ও নদী সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। সেই সব নিয়মকানুন ভেঙে এই সব অবৈধ কাজকর্ম চলছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে গঙ্গার গতিপথ পাল্টে গিয়ে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। গঙ্গার জীব বৈচিত্র্যও ধ্বংস হবে।’

    হাওড়ার মহকুমা শাসক তথা বালি পুরসভার বর্তমান প্রশাসক অমৃতা বর্মণ রায় বলেন, ‘আপনাদের কাছে অভিযোগ শুনলাম। আমি ইন্সপেকশন করাব। তার পরে বলতে পারব, ওখানে আইন ভাঙা হয়েছে কি না।’ বালির বিধায়ক রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি শুনেছি, ওখানে একটি নির্মাণ হচ্ছে। আমি পুরসভার একজিকিউটিভ অফিসারকে বলেছি, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। নির্মাণটি আইনি কি বেআইনি, যেমনটা রিপোর্ট আসবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’

    বালির আইনজীবী ও তৃণমূল নেতা প্রবীর রায়চৌধুরী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া বার্তা দিয়েছেন। নদী বা জলাভূমি, যাই বোজানো হোক না কেন, তা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)