এই সময়: নারী সুরক্ষায় তৈরি ৪৯৮ (এ) ধারার অপব্যবহার নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত এবং বিভিন্ন হাইকোর্ট ইদানীংকালে অনেক বারই সতর্ক করেছে। এ বার অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ একেবারে অন্য মতই পোষণ করল। বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি এন কোটেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চের বক্তব্য, ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৪৯৮ (এ) ধারা, যা স্বামী বা স্বামীর আত্মীয়ের দ্বারা নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, তা কোনও ভাবেই সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদকে লঙ্ঘন করে না। সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনের চোখে সবাই সমান এবং সবাই সমান ভাবে আইন দ্বারা সুরক্ষিত।
ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি বা জন্মস্থান নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিই আইনের চোখে সমান। কিন্তু মহিলাদের একাংশ তাঁদের সুরক্ষায় তৈরি ৪৯৮ (এ) ধারার অপব্যবহার করছেন এবং এর ফলে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলার শুনানিতেই মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চের বক্তব্য, ৪৯৮ (এ) ধারার অপব্যবহারের যে ধারণা, তা ভ্রান্ত।
প্রতিটি মামলাকে পৃথক ভাবে বিচার করতে হবে। এই ধারা আইনের চোখে সব নাগরিকের সমতার (১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ) ধারণা ভঙ্গ করে না। আদালতের ব্যাখ্যা, সুনির্দিষ্ট ভাবে মহিলাদের সুরক্ষার জন্যে ৪৯৮ (এ) ধারা তৈরি করা হয়েছিল। সামগ্রিক ভাবে মিস ইউজে়র অভিযোগ না করে প্রতিটি মামলাকে পৃথক ভাবে বিচার করাই সমীচীন।
মামলাকারীর আইনজীবী দাবি করেন, পৃথিবীর সব দেশেই গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে পুরুষ–নারী লিঙ্গ–নির্বিশেষে বিচার পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু এ দেশে শুধুমাত্র নারীর সুরক্ষাতেই আইন তৈরি হয়ছে। বিচারপতিদের অবশ্য যুক্তি, আমরা আমাদের দেশের আইনই মেনে চলব। অন্য দেশের উদাহরণ অনুসরণ নিষ্প্রয়োজন। আদালতের বক্তব্য, সব আইনেরই অপপ্রয়োগ হতে পারে। তাই আদালতকে মামলাগুলি পৃথক ভাবে বিচার করতে হবে। নারী–সুরক্ষায় তৈরি আইনগুলির অপব্যাখ্যা করা বা নেতিবাচক মত ছড়ানোর মতো ‘খারাপ অভ্যাস’ থেকে বিরত থেকে এগুলি সম্পর্কে ইতিবাচক প্রচার করা জরুরি বলেও মত শীর্ষ আদালতের।
মামলাকারীকে আদালতের প্রশ্ন, ‘আমরা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করব, সেটা কি কাম্য? সব আইনেরই মিস ইউজ় হয়। সব দিক খতিয়ে দেখে বিচার করাই আদালতের কাজ।’ মামলাটি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, বিচারপতি সূর্যকান্ত আগামী দিনে দেশের প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন। ৪৯৮ (এ) ধারা নিয়ে জনমনে ছড়িয়ে পড়া ধারণা ভাঙার ক্ষেত্রে তাঁর মন্তব্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।
নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা বিচারপতি সূর্যকান্তর বেঞ্চের পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, শ্বশুরবাড়িতে নারীর নিগৃহীত হওয়ার বিপুল পরিমাণ ঘটনার মধ্যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ সামনে এনে ৪৯৮ (এ) ধারা নিয়ে পরিকল্পিত ভাবেই বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে। সুপ্রিম কোর্ট সেই বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টাকে কাঠগড়ায় তুলে যর্থার্থ ভূমিকাই পালন করেছে।