• মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে আড়াল থেকে মদত এসেছে বর্ডার পেরিয়ে, রিপোর্ট গোয়েন্দাদের
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়: মুর্শিদাবাদে অশান্তির পিছনে বহিরাগতদের হাত রয়েছে বলে নির্দিষ্ট কিছু সূত্র পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। স্থানীয় বেশ কিছু দুষ্কৃতীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বহিরাগতরা পরিকল্পনামাফিক এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন তাঁরা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ লাগোয়া বাংলাদেশ থেকে ঝামেলায় মদত দেওয়া হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। কিন্তু ঠিক কারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে, সে বিষয়ে জানতে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই এলাকায় অশান্তির ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালে সিএএ বিলের প্রতিবাদে বেশ কয়েকদিন ধরে মুর্শিদাবাদ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। একের পর এক ট্রেন, বাস জ্বালিয়ে দেওয়া ছাড়াও সে সময়ে স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, টানা কয়েকদিন তাণ্ডব চালাতে ওই এলাকা এবং বাইরের কিশোরদের কাজে লাগানো হয়। যাদের অনেকেই সিএএ–আসলে কী, তাই ঠিক ভাবে জানে না।

    তবে এবারের প্রেক্ষাপট খানিকটা আলাদা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্কের জেরে এমনিতেই এ রাজ্যের সীমান্ত নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় এসে অজিত দোভালও মুর্শিদাবাদ নিয়ে গোয়েন্দাদের সতর্ক করে গিয়েছিলেন। সেই আলোচনায় উঠে এসেছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ভূমিকাও। সব মিলিয়ে সীমান্তের জেলাগুলি যে রীতিমতো স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে সে বিষয়েও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে।

    ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকেও মুর্শিদাবাদের ঘটনার নেপথ্যে বহিরাগতদের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে বিএসএফকে। সোমবার মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাসরা জানিয়েছিলেন, বহিরাগতরা ঢুকে অশান্তি করেছে। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্ররা সরাসরি বিএসএফের একাংশের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ঢিলেঢালা নজরদারি এড়িয়ে বাইরের থেকে লোক ঢুকে এলাকা অশান্ত করেছে।’

    গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আক্রান্তরা বলছেন, যারা হামলা চালিয়েছে তারা নিজেদের মুখ–চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে এসেছিল। ফলে কম বয়সি সেই যুবকদের চেনা যায়নি। তবে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে এই ধরনের তাণ্ডব চালানো সম্ভব নয় বলেও গোয়েন্দাদের ধারণা।

    এমন অশান্তির সম্ভাব্য কারণ কী?

    গোয়েন্দাদের যুক্তি, এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এক, মাত্র কয়েকমাস আগে মুর্শিদাবাদ থেকে আনসারুল্লা বাংলা টিমের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে জানা যায়, ওই জেলায় সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন রিক্রুটের কাজ শুরু করেছিল তাঁরা। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর থেকে ওই সীমান্তে গোরু, মাদক পাচার অনেকটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত চক্রের সদস্যরা ঝামেলা পাকানোর জন্য আগাম পরিকল্পনা করেছিল, যাতে বিএসএফের উপরে পাল্টা চাপ তৈরি করা যায়।

    মঙ্গলবার এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন,‘কয়েকমাস আগে মুর্শিদাবাদ সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি গ্রামে ‘ইসলামিক স্টেট অফ বেঙ্গল’ নামে একটি সংগঠনের লিফলেট পাওয়া গিয়েছিল। কারা সেগুলো ছড়িয়েছে তা বোঝা না গেলেও নাশকতা ঘটানোর জন্য মুর্শিদাবাদে যে বেশ কিছুদিন ধরে সলতে পাকানোর কাজ চলছিল, তা স্পষ্ট।

    রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য কারা ধুলিয়ান বা ওই এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। এডিজি(আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম বলেন, ‘যারা বা যে সংগঠন এই কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)