এই সময়, ধুলিয়ান: এত বছর পাশাপাশি থাকা। সুখে–দুঃখে যৌথযাপন। একে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া।
হঠাৎ করেই বদলে গেল ছবি। চারদিকে অশান্তির আবহ। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে ভিনজেলায় ঠাঁই নিয়েছেন অনেকেই। তাই, ধুলিয়ান পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লালপুর ছেদিপাড়া ও সিংপাড়ার কিছু মানুষের মনেও সন্দেহের মেঘ জমেছিল। আতঙ্ক মনে জাঁকিয়ে বসেছিল, যদি কিছু ঘটে! কেউ যদি হামলা চালায়! তবে কি ভিটে ছেড়ে চলে যাওয়াই উচিত?
রত্না সরকার, কল্যাণী সরকাররা এলাকা ছাড়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সেরেও ফেলেছিলেন। গোছগাছও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেওয়ালেরও তো কান আছে! সে কথা জানতে পারেন পড়শি হবিবুর রহমান, নাদিমুল হকরা। সটান রত্নাদের বাড়িতে চলে যান তাঁরা। ভরসা জোগান, আশ্বস্ত করেন। জানান, যা–ই হয়ে যাক না কেন, পাশে থাকবেন। থেকেওছেন। কল্যাণীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে যেচে তুলে নিয়েছেন নাদিমুলরা। অবশেষে ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন কল্যাণী–রত্নারা। আপদে–বিপদে যাঁদের এত বছর পাশে পেয়েছেন, তাঁদের চেয়ে আপনার জন আর কে আছে, এই মুহূর্তে?
ধুলিয়ান পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাগচিপাড়ার তোফাজুল মোহলদার, নাজির হোসেনরা আবার সোমবার সন্ধে থেকে এলাকায় কড়া পাহারা দিচ্ছেন। রাতের অন্ধকারে চুপিসারেও যাতে কেউ কিছু ঘটাতে না পারেন, সে বিষয়ে সজাগ তাঁরা। পণ করেছেন, খারাপ কিছু হতে দেবেন না। সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলছেন, ‘এ দিন সকালে ‘অযথা আতঙ্কিত হবেন না’ বলে মাইকে প্রচার করেছি। যেখানে যে সম্প্রদায়ের মানুষের বাস বেশি, সেখানে সেই এলাকার সংখ্যালঘু মানুষকে পাহারা দেওয়ার আবেদন জানাই। তার পরেই শুনলাম, কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে ভরসা দিয়ে এলাকায় পাহারা দিয়ে রেখেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।’ পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বরেন্দ্রনাথ সিং বলেন, ‘এলাকার কয়েকজন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাড়ি বাড়ি ঘুরে হিন্দু পরিবারদের পাশে থাকার কথা বলেছেন। ভয় ও আতঙ্ক রয়েছে খানিকটা। কিন্তু তাঁদের কথায় কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছি।’
পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তোফাজুলের কথায়, ‘বাপ-দাদাদের আমল থেকে পাশাপাশি বাস করছি। কোনও দিন কোনও ঝুট-ঝামেলা হয়নি। এখন কেউ ঝামেলা করতে এলে শুনব কেন? আমরা সকলে মিলে এলাকা পাহারা দিচ্ছি।’ নাজির বলছেন, ‘এক সঙ্গে ইদ ও পুজো কাটাই। অথচ লোকজন ভয়ে ঘর ছাড়ছে, সে কথা শুনে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি কিছুতেই। আমরা একসঙ্গেই থাকব! কেউ কিছু করতে পারবে না।’
বাসু সরকার, ভীম সরকার, গোলাপ ছেদি, ভোমরাজ সরকাররা বলছেন, ‘বাজারের ঝামেলা বাজারেই মিটে যেত। কিন্তু বাড়িয়ে তোলা হলো। তোফাজুল, নাজিররা পাশে আছে। আমাদের ভয় কীসের! ওরা থাকতে কোনও রকম আতঙ্কিত হচ্ছি না।’