• ওয়াকফ সম্পত্তি ভোগ করে মুষ্টিমেয়ই, দাবি মুসলিম নেতাদের
    এই সময় | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
  • এই সময়, বহরমপুর: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে যাঁরা বিক্ষোভ আন্দোলনে নামছেন, ওয়াকফ সম্পত্তি তাঁদের কোনও কাজে লাগে না — মন্তব্য তৃণমূলের রাজ্য সংখ্যালঘু সেলের সাংগঠনিক সম্পাদক তথা সর্বভারতীয় হাজি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুখতার আলির।

    তাঁর যুক্তি, ‘সাধারণ মুসলিমের কোনও উপকারে লাগে না ওয়াকফ সম্পত্তি। এত ওয়াকফ সম্পত্তি থাকলেও রাজ্যে একটা স্কুল, কলেজ বা হাসপাতাল তৈরি হয়নি।’ তাঁর সাফ কথা, ‘বিপুল পরিমাণ ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে রয়েছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই শাসকদলের লোকজন তার ক্ষমতা ভোগ করেছে।’

    একই অভিযোগ অল বেঙ্গল ইমাম ও মুয়াজ্জিন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক নিজামুদ্দিন বিশ্বাসের। তিনি বলছেন, ‘রাজ্য জুড়ে এক লক্ষ একর সম্পত্তি রয়েছে ওয়াকফের। মুর্শিদাবাদেই রয়েছে প্রায় চার হাজার একর সম্পত্তি। ওই সব সম্পত্তি রাজ্যে যখন যে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই ভোগ দখল করেছে। মোট ওয়াকফ সম্পত্তির ৭০ ভাগ বেদখল হয়ে রয়েছে।’

    ওয়াকফ বোর্ডে এই মুহূর্তে শতাধিক শূন্য পদে কোনও কর্মী নিয়োগ হয়নি। বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি দখলে নিতে চাইলে পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে নির্ভর করতে হয় বোর্ডকে। ওয়াকফ বোর্ডের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। নিজামুদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় থানার উপরে নির্ভরশীল হলেই রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে। ওই সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করা বিশবাঁও জলে চলে যায়।’ ওয়াকফ সম্পত্তি দেখভাল করতে একজন ‘মুতায়াল্লি’ নিয়োগ করা হয়। অভিযোগ, রাজনৈতিক চাপে মুতায়াল্লি তাঁর অধীনস্থ ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করতে অথবা লিজ় দিতে বাধ্য হন।

    মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার গোকর্ণ গ্রামের আবু তাহের ব্রিটিশ আমলে তাঁর সম্পত্তি ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। গোকর্ণ থেকে কেতুগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১২০০ একর জমি ছিল তাঁর। অভিযোগ, তার মধ্যে সালার এলাকায় ওই সম্পত্তি এক তৃণমূল নেতা নাকি দখল করে রেখেছেন। লালবাগেও নবাবি আমলের বিঘার পর বিঘা ওয়াকফ সম্পত্তিও শাসকদলের নেতানেত্রীদের অনুগামীরা দখল করে রেখেছেন। মাস চারেক আগে ওই সম্পত্তির দখলদারি নিয়ে লালবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বোমা ও গুলি চলে। মুখতার আলি জানাচ্ছেন, কলকাতার শিয়ালদহে বুআলি ওয়াকফ এস্টেট-এর হস্টেল ও দু’বিঘা জমি বেদখল হয়ে গিয়েছে। রডন স্ট্রিটে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে শপিং মল নির্মাণ আটকে রয়েছে আদালতের নির্দেশে। মুখতারের প্রশ্ন, ‘ওয়াকফকে সামনে রেখে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ধান্ধাবাজি করছেন। এতে সাধারণ মুসলিমের কী হবে?’

    সর্বভারতীয় ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের অভিযোগ, ‘বাম আমলে ওয়াকফ বোর্ড হাতে গোনা কয়েকজন কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তাঁরা চাননি, ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত হোক। তৃণমূলের আমলে সেই চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে, তবে তা খুব ধীরে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বলব, দ্রুত ওই সম্পত্তি চিহ্নিত করা হোক এবং দখলদারিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’ রাজ্জাকের কথায়, ‘শাসক দলে থাকা লোকজনই বেশি করে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে রাখে। সে সব উদ্ধার করে স্কুল, কলেজ, হস্টেল নির্মাণ করা হোক।’

    প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘তৃণমূলের নেতারাই সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন।’ যদিও ওয়াকফ বোর্ডের অন্যতম সদস্য, জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান অধীরের বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, ‘২০১১–র আগে যদি কেউ মুতায়াল্লি হয়ে থাকেন এবং তিনি ওই সম্পত্তি ভোগদখলের জন্য কাউকে দিয়ে থাকেন, সেটা অন্য কথা। তবে শাসকদলের লোকজন ওই সম্পত্তি দখলে রেখেছে, তা ঠিক কথা নয়।’ খলিলুরের দাবি, ওয়াকফ আইন সংশোধনের ফলে সাধারণ মুসলিমদের মনে হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার যেমন রাষ্ট্রের সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে, আগামিদিনে ওয়াকফ সম্পত্তিও বিক্রি করে দেবে। তাই বিক্ষোভ-আন্দোলন।

  • Link to this news (এই সময়)