দিব্যেন্দু সিনহা, জলপাইগুড়ি
ছাড়া পেয়ে রোগীরা হাসপাতাল থেকে বেরোলেই তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট কয়েকটি ওষুধের দোকানে। সেখানে তাঁদের ধরানো হচ্ছে মোটা অঙ্কের বিল। পরে সেই দোকান থেকে কমিশন পাচ্ছে দালালরা। এ দিকে বন্ধ রয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের কাউন্টার। সেই সুযোগে হাসপাতালে গজিয়ে উঠেছে ওষুধের দালালচক্র। অভিযোগ, চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বেশ কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স চালক। তাঁরাই গ্রাম থেকে আসা রোগীদের নিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট ওষুধের দোকানে। অথচ হাসপাতালের আউটডোর থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ। জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে এমনই ছবি নিত্যদিনের।
জানা গিয়েছে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রোগীদের কম দামে ওষুধ দেওয়ার জন্য বেসকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের কাউন্টার খোলা হয়েছিল জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। কয়েক মাস আগে ওই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কাউন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও হাসপাতাল কর্মীদের বক্তব্য, 'কাউন্টার বন্ধ থাকলেও রোগীরা হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছেন। মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি কল্যান খাঁর বক্তব্য, 'মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের সমস্ত ওষুধ আউটডোর কাউন্টার থেকে দেওয়া হয়। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের বলে দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা যেন আউটডোর থেকেই ওষুধ নেন। তবে এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
কয়েক দিন আগে হাসপাতাল রোডে সদ্যোজাতকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি ফিরছিলেন এক দম্পতি। ওষুধ কেনার কথা বলতেই একটি রাস্তার ধারের একটি ওষুধের দোকানে গাড়ি থামান চালক ওয়াহিদা রহমান। অভিযোগ, চালক তাঁদের বলেছিলেন, ওই দোকান থেকেই ওষুধ কিনতে হবে। পরে ওই দম্পতি প্রতিবাদ জানান, যখন হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ মিলবে, তখন কেন অন্য ওষুধের দোকান থেকে তা নিতে হবে? পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে চালক বলেন, 'আগামীতে এমন কাজ আর কখনও হবে না।'
একই ফাঁদে পড়েছিলেন হলদিবাড়ির বাসিন্দা রফিকুল হক। হাসপাতাল থেকে ছুটির পরে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের পরামর্শে তিনি বাইরের দোকান থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করে ওষুধ কেনেন। রফিকুলের অভিযোগ, 'সমস্ত ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া যাবে না বলে অ্যাম্বুল্যান্স চালক আমাকে বলেছিলেন।' জলপাইগুড়ি অ্যাম্বুল্যান্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক দিলীপ দাস বলেন, 'আউটডোরের ওষুধের কাউন্টার সিএমওএইচ অফিস চত্বরে থাকায় অনেকেই সেটি খুঁজে পান না। সেই সুযোগে তাঁদের বাইরের কিছু ওষুধের দোকানে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স চালক।'