একটা পঞ্চাশ পয়সার দাম ১৬ হাজার টাকা! পুরনো কয়েন বাতিলের খাতায় ফেলে ভুল করছেন না তো?
প্রতিদিন | ১৬ এপ্রিল ২০২৫
অভিরূপ দাস: বুক পকেটে পুরনো দু’টো দু’টাকার কয়েন। তা দিয়ে হয়ে যাবে কাশ্মীর টুর! বিশ্বাস না হলে আবার পড়ুন। চৈত্রে ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে যে একগুচ্ছ বাতিল পাঁচ পয়সা ময়লার বালতিতে ফেলে দিয়েছেন তার দাম হয়তো কয়েক হাজার টাকা! বহুবিধ বিশেষত্বের কারণে পুরনো কিছু বাতিল কয়েনের দাম আকাশছোঁয়া। একাধিক বাড়িতে খুঁজলে পাওয়া যাবে পুরনো দিনের বাতিল কয়েন। মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য দু টাকা-এক টাকার কয়েনের মূল্য কখনও চোদ্দো হাজার, কখনও ৩০ হাজার হতে পারে।
রাজ্যের পুরনো মুদ্রার ‘ডিলার’-রা জানিয়েছেন, অনেক বাঙালিই জানেন না বাড়িতে হেলাফেলায় পড়ে থাকা দু’টাকা-পঁচিশ পয়সার কয়েনের দাম আকাশছোঁয়া। কারণ? তাদের আলাপ নেই কোনও ‘নিউমিসম্যাটিস্টস’-এর সঙ্গে। মুদ্রা যাঁরা সংগ্রহ করেন তাঁদের ওই নামেই ডাকের মুদ্রা-বিক্রেতারা। প্রতিটি পুরনো কয়েনে রয়েছে বিশেষ কিছু বিশেষত্ব। যত তার ‘অ্যাভেলেবিলিটি’ বা সহজলভ্যতা কমতে থাকে তত বাড়ে দাম। মুদ্রা বিশেষজ্ঞ সাগর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোন সালে কয়েন তৈরি হয়েছিল। সেই বছর ওই ধরনের কতগুলো কয়েন বানিয়েছিল টাঁকশাল। এই মুহূর্তে আর কতগুলি বেঁচে আছে- এসবই নির্ধারণ করে কয়েনের দাম।
যেমন? ১৯৮৬ সালে মুম্বই টাঁকশালে তৈরি পঞ্চাশ পয়সার দাম এখন ১৫ হাজার টাকা! সাগর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ওই বছর দুটো টাঁকশাল থেকে পঞ্চাশ পয়সা তৈরি হয়েছিল। একটা কলকাতা, অন্যটা মুম্বই। সহজলভ্যতার কারণে সে বছর কলকাতার টাঁকশাল থেকে তৈরি পঞ্চাশ পয়সার বাজারমূল্য একটু কম। কিন্তু ওই বছর মুম্বই টাঁকশাল থেকে যে আধুলি তৈরি হয়েছিল তার এক একটার বাজার মূল্য ১৫ হাজার টাকা।” যদি কারও বাড়িতে ১৯৮৬ সালে মুম্বই টাঁকশালে তৈরি পঞ্চাশ পয়সা থাকে তিনি তা বিক্রি করে কয়েন পিছু ১২ হাজার টাকা দাম পেতে পারেন।
দেশের তিনটে জায়গায় তৈরি হয় কয়েন। কলকাতা, হায়দরাবাদ, নয়ডা আর মুম্বাইয়ের মিন্ট বা টাঁকশালে তৈরি হয় কয়েন। কোনও কয়েনে থাকে রুপো, কোনওটায় নিকেল। কোনওটা রুপো-নিকেল মিশিয়ে তৈরি। বাতিল কিছু কয়েন ছাড়াও রয়েছে স্মারক মুদ্রা। তার দামও কম নয়। শশী সুর লেনের মুদ্রা বিক্রেতা বাবু গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে রয়েছে তামিলনাড়ুর বৃহদীশ্বর মন্দিরের এক হাজার বছর পূর্তিতে এক হাজার টাকার কয়েন। তা তৈরি করেছিল হায়দরাবাদ টাঁকশাল। এক হাজার টাকার সে কয়েনের দাম এখন সাড়ে ছ’হাজার টাকা। মুদ্রা বিশেষজ্ঞ সাগর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই এক হাজার টাকার কয়েন কেনা-বেচার জন্য নয়। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার জন্যই।
সম্প্রতি এমনই নানা মুদ্রার সংগ্রহ দেখা গেল ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল হবি এক্সপো-তে। দক্ষিণ কলকাতার এক ব্যাঙ্কোয়েটে বসেছিল ‘শখ’ পূরণের মেলা। সেখানেই অংশ নিয়েছিলেন বাংলার তাবড় মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা। যাঁদের বাড়িতে অসংখ্য বাতিল কয়েন। কিন্তু জানেন না তার বাজারদর, কী করবেন তারা? মুদ্রা বিশেষজ্ঞদের কথায়, প্রত্যেকবার শনিবার করে কলকাতা জিপিওতে একটা প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। রাজ্যের কয়েন সংগ্রাহক-বিক্রেতারা হাজির হন সেখানে। বাড়িতে পড়ে থাকা পুরনো কয়েন সেখানে নিয়ে চলে আসতে পারেন যে কেউ। জেনে নিতে পারেন বাজারদর। যেহেতু নানা বিশেষত্বের কারণে পুরনো কয়েনের দাম আকাশছোঁয়া তা দেখে প্রতারকরাও হানা দিয়েছে এই দুনিয়ায়। একাধিক বাড়ির গৃহবধূরা তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সাগর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ছোট্ট স্টেনলেস স্টিলের পঁচিশ পয়সাকে বহুমূল্য বলে বিক্রি করা হয়েছে কারও কাছে। আমাদের কাছে ওই কয়েন নিয়ে আসলে দেখছি কোনও বিশেষত্ব নেই। সামান্য স্টেনলেস স্টিলের পয়সা।”